বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭

গল্পহীন দুপুরের একটি দিন

গল্পহীন দুপুরের একটি দিন

নশ্বর নিটোল

গত দুদিনের ইলশেগুড়ি বৃষ্টিটা কেমন যেন চারদিকটাকে থমথমে করে দিয়েছে। আজ অবশ্য রোদ উঠেছে খানিকটা। সকালে কতটা সময় রোদ মেঘের লুকোচুরি খেলার পর অবশেষে সূর্যদেবই শেষ হাসিটা হাসল। গত দুদিন ধরেই একটা গল্প লেখবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু গল্পটা আর শেষমেশ খুঁজেই পাচ্ছি না। আজকে বাইরের রোদ ঝলমলে আকাশটা দেখে মনে হল লিখতে বসে যাই। জমে থাকা বৃষ্টির জলে চকচকে সাদা আলো ফেলে যেন এক অন্যররকম সৌন্দর্যের কথা আমাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছে কেউ। কিন্তু কোন লাভ হল না। সেই একই গল্পহীনতায় বিরক্ত হয়ে লেখা বাদ দিয়ে উঠে গেলাম ডেক্স থেকে।  
সিগারেটের নেশা ধরছে খুব। এ দুদিনে ঘরে বসে বসে তিন প্যাকেট সিগারেটের আর একটাও অবশিষ্ট নেই। ভর দুপুরবেলা। লাঞ্চ এর সময়। ধুরো! ওসব ভাবে কে? সিগারেট ছাড়া তো একমুহূর্ত চলছেই না আমার। অগত্যা, বাইরে যেতেই হয়। দোকানপাট খুব একটা খোলা নেই। একটু দূরেই যেতে হল। অবশেষে একটা সিগারেট ধরিয়ে বসে পড়লাম টং এর বেঞ্চিতে। রোদ ঝলমলে হলেও সেই উষ্ণতা আর নেই। উওরের হলাকা বাতাস মাঝেমাঝে এসে একটা চেনা-অচেনা অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে। 
চোখ আটকে যায়। একটি মেয়ে হেঁটে আসছে। আচ্ছা, রবিন্দ্রনাথ তো কৃষ্ণকলির কথা বলেছিলেন। সে কি দেখেছিলেন এই মেয়েটাকে। হয়তো হবে। হয়তো বা না। হ্যা, মনে হচ্ছে সে হেঁটে আসছে আমার দিকেই। 
কিন্তু আমার সামনে দিয়েই যে চলে গেল, চলে গেল অন্য কোথাও। আমার ঘোর কাটছে না।  কখন সিগারেটের আগুনটা নিভে গেছে টেরই পাই নি। হাটতে হাটতে বাসায় চলে এলাম। স্বাভাবিক হতে পেরেছি কতটা তা অবশ্য এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ। 


কিন্তু আমার ঘোর লাগবার আরো একটা উপলক্ষ যে বাকিই রয়ে গেছে। সেই অপরূপা ঠিক দাড়িয়ে আছে আমার দরজার সামনে! আমার চারপাশটা কেমন যন নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। দাড়ালাম সামনে গিয়ে....
খুঁজছেন কাউকে?
হ্যা, আপনাকেই।
আমাকে!?

আমার মস্তিষ্কে অসাড় হবার মত আর কোন অংশই মনেহয় তখন আর অবশিষ্ট ছিল না। স্নায়ুগুলো মনেহয় ক্রমশ আলাদা হয়ে যাচ্ছিল পেশি থেকে।

দাড়িয়ে থাকবেন এখানেই। ভেতরে যাবেন না। 
কোন কথা বলতে পারলাম না আমি। দরজা খুলে ভেতরে এসে বসলাম। আসল সেও। কোন কথা না বলেই ধুপ করে বসে পড়ল মেয়েটা। আর আমিও চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকলাম। সবকটা শব্দকে যেন কোথাও ফেলে এসেছি।
- কেমন আছেন? 
- ভাল।
- আমি কেমন আছি তা জানতে চাইবেন না জানি।  অন্তত অভিযোগগুলোতে বলুন। এতটা নিশ্চুপ কেন?
- অভিযোগ!
- হ্যা, এই অবহেলা, তাচ্ছিল্য, নিরুত্তর পড়ে থাকা চিঠি.....এ নিয় কত অভিযোগ ছিল আপনার। কিন্তু আজ কিছু বলছেন না কেন আপনি?
- চিঠি! কোন চিঠি?
- কেন ভুলে গেলেন! একটু নাহয় দেরি করেই  ফেলেছি।  তাই বলে আপনি ভুলে যাবেন! ভুলে গেলেন! কিন্তু তা তো হবার কথা না। নাকি না বোঝার ভান করছেন সবকিছু বুঝেও।
- আপনার কোন কথাই আমি বুঝতে পারছি না।বিশ্বাস করুন আমায়।
- আপনার কি মনে আছে সেই সময়টার কথা যখন আপনি আমাকে বারবার দেখতে চাইতেন। আর আমি।  কেবলই লুকিয়ে রাখতাম নিজেকে। চাইতাম, আমার ভালবাসা,  আমার প্রেম অন্ধকার হাতরে খুঁজে নিক ছায়াকে। কিন্তু আজ,  আজ তো আমি ঠিক আপনারই সামনে দাড়িয়ে। তবে কেন সেচ্ছা বিরহ? কেন এত অভিমান আপনার?
- প্রেম,  ভালবাসা, বিরহ এসবকিছুতো কেবলই আমার কল্পনাজুড়ে। কিন্তু কে আপনি? এসব কিছুর সাথে তো আমি নেই। আমার তো কোন বাস্ততার জগৎ নেই।
- আমি,  আমি ''মাধবীলতা''। প্রেম নিয়ে আসেছি। এই যে আমি সেই ল্যাভেন্ডার নিয়ে এসেছি, আমাদের প্রেমের প্রতীক ছিল এই ল্যাভেন্ডার। আমার এই হৃদয় গ্রহন কর, ''প্রেমাংশু''। 
- আমি তো "প্রেমাংশু " নই। প্রেমাংশু তো নেই এখানে
- তবে....
- আমি "রক্তব"।
- তাহলে "প্রেমাংশু " কোথায়? ওকে যে  ভালবাসি খুব।
- আমিতো জানিনা। হয়তো সে হারিয়ে গেছে শহরের মানুষের ভিড়ে। হয়তোবা চিরতরে।

মেয়েটা আর একটাও কথা বলে না। ধীর, শান্ত, শ্রান্ত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যায় গলি থেকে। হতে ল্যাভেন্ডারগুচ্ছ, যত দূরে যেতে থাকে সৌরভটাও ক্ষীণ হতে থাকে ততটাই। হয়তো সেই  সৌরভই খুঁজে পাবে প্রেমাংশুকে অথবা হারিয়ে যাওয়া প্রেমাংশুকেই খুঁজে পাওয়া যাবে সেই সৌরভে।

বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭

My love will never sallowish

My love will never sallowish

Nossor Nitol

Love! A camouflage, convener of all the aches
Love! So sappy to you, and all this I know 
Love! Deathly Pale, it's numb part of souls
Love! Beaten and overthrow, haven't anything to do.


But I,  still stand with this,
And my love will never sallowish.
The paradise can be true 
Sinners can be rue
But my love will never sallowish.
The earth can be oblique
Seldom sents can be flee
How-beit, my love will never sallowish.

বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

একটা কথা বলি, প্রিয়ংবদা?

একটা কথা বলি, প্রিয়ংবদা?

নশ্বর নিটোল

একটা কথা বলি, প্রিয়ংবদা?
আর দূরে সরে যেও না তুমি
দেখো, তোমার জন্যে নিয়ে এসেছি আরও একগুচ্ছ রক্তগোলাপ
আজ শ্রান্ত বিমগ্ন রাতের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করো না তুমি।
প্রিয়ংবদা?
জানো? জানো কি তুমি?
এক মদ্যপ কবি কতকাল অপেক্ষা করছে তোমার জন্যে
কত ভদকা, জিন, রাম আর হুইস্কির বোতল খালি হয়েছে তোমার প্রতীক্ষায়
কতবার হৃদপিন্ডটা শীতল হয়ে তোমার শরীরের স্পর্শহীনতায়।
জানো কি তুমি?
তোমার প্রতি সবটুকু ভালবাসা থিতিয়ে পরেছে মস্তিষ্কের তলানিতে,
আথবা লুকিয়ে রয়েছে শত কোটি নিউরনের ভেতর কোথাও।
জানো তুমি?
আমার অভ্যাসে মিশে গেছো সম্পূর্ণ
আমার সবকটা কবিতা, আসন্ন গল্পের প্রতিটা পর্ব
কেবলই তোমাতে বিলীন হয়ে গিয়েছে ক্রমশ।
প্রিয়ংবদা,
আমিতো অনায়াসে বিদায় দিতে পারবো না তোমাকে
অনন্ত বিরহে তো পুড়তে পারব না চিরকাল আমি।
এর চেয়ে ভাল হবে হয়তো যদি ক্ষত-বিক্ষত, বিদ্ধস্ত পড়ে থাকি। 

বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭

The Yellow Coffin

The Yellow Coffin

Nossor Nitol( নশ্বর নিটোল )



Is the dream for sleep not ever for rouse? Is there any word called 'last sleep' not ever haven't?In fact, if we think so much about any matter, it became more mysterious.

I've passed my last seven years in this place. Now the hills apex is not as blooming as that first day. In that day when I came here, the sky was so gloomy, how was that darkness and the rain was falling down from the welkin. Maybe, that rain was a vicar of the tears of my dona. I saw two other coffins on that day also. Jarold's and Antarine's. But their coffins were different from mine. Black and bonded. Me and my coffin both were the pedestrian of an another way. I had a coffin - yellow,  alone and isolated. None of my favorite poetry were carved on my tomb like them. Once, my friends were calling me, 'Forever alone' as a joke. No, that joke was not being true in my laic world . I was able to touch the love before my death. But these two words could be written here for a while. Which lover wants the death of his beloved? Although he knows the death is certain.....  how many coincidences incidents are happened like Jarold and Antarines. Whatever, those words were not written at last. The cause might be the dissent of her or any other reason.

Now a days,  I'm not use to with perambulation .  Age is the fact. " Death stops the age. " who told you? That's  a lie.  Death can't obtain your youth.
I'm bored now. Need a relaxation. So, I come out. The cemetery is so dumb. The stars are glittering in the sky. The half moon want to say anything to me, but what? I need a cigar at this moment. A lonely place, where I can write my poetry,  need a pen, need some pages. But these are not available here. So what, now I'll declaim my old poems in this starry night. But for whom? Who will hear? Today there is no one to keep her head on my shoulder. There is no one to stroked on my beard. No one.
Ohh, there's a new tomb. I don't ever seen any tomb like that. Who is sleeping inside? I look at the epitaph.  So shiny and glassy. Lora Santiago Ana . I'm numbed. I'm mazed. She? I wanna enter inside and do that without any regard.  A coffin.  Oh, what's that? A yellow coffin. Did she remember that verse?"Our coffin will be yellow. " Go along with more instancy.
A lady. Not too old,  not too young. She has a matronly look. I can detect her,  it's so easy to me. Her wiggle eyes, tranquil lips, stable eyebrows take me back in those days. How can I forget her, her memories? But today she is close to me. What can I say? A thin white spence is worn by her. It makes her more attractive,the shape of her esile breast makes me screwed. Maybe,  my mind wants to vanquished in a vast ocean. Wants to reduce the fire of hell and  step up the haven.
She looks at me. In All Probability, she's able to identify me. I have so many tale to say but can't say a single word. Reversely she asked me, "Why so isolated?"
"Don't know. "
"Why are we so far?"
"Because it's your will."
"What do you wanna say?"
" I wanna say that our tombs are different and isolated. But you were able to keep them together. "
" You can think this. But it's not right. Look, your tomb is surrounded, there's not a single inch to dig."
" So, the atmosphere makes us separate out. "
"Hahaha, true. Man always want to do, the world won't help you to make them true. "
"So?"
"Forever alone."
"No, our coffins are same. Both are yellow. "
" Yaa, The balm is, ' The Yellow Coffin.' "

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

প্রিয়ংবদা: একটি গোলাপ অথবা তীক্ষ্ণ বুলেট(পর্ব:১)

প্রিয়ংবদা: একটি গোলাপ অথবা তীক্ষ্ণ বুলেট
(পর্ব:১)

নশ্বর নিটোল



বৃষ্টি থেমে গেছে। আকাশটা বেশ নীলাভ। ছোট ছোট, ছাড়া ছাড়া মেঘের ওপর বিকালের সূর্যর সোনালি আভা এসে পড়েছে। বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে অরণ্য। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ দারুণ সুন্দর এই প্রকৃতির প্রতি নয় এখন। সামনেকার বাসাটার চারতালার বারান্দার দিকে তার চোখ। সুশুষ্ক নয়নে সে যেন দেখছে কাউকে। নিশব্দ, নির্বিকার।

মেয়েটাকে?, হ্যা, মেয়েটার নাম প্রিয়ংবদা। ওকেই দেখছে সে।  দেখাটা একদিন দুদিন নয়। বছর তিনেক তো হবেই। অবশ্য তখন প্রথমদিকে ওরা সে বাসার পাঁচতলায় ছিল। তখন বেশ ভালভাবে দেখা যেত ওর ঘরটা। সারটা দিনই তো মেয়েটা পড়ে থাকে বই নিয়ে। আর অরণ্য ভাবে সারাদিন কি এত পড়ে মেয়েটা? এখানে ব্যাপারটা কিন্তু ঐ চোখের দেখা পর্যন্তই। আজ অবধি দুজনের কথা হওয়া তো দূরে থাক চোখাচোখিই হয়নি। অরণ্যর এসব ব্যপারে আগ্রহ অবশ্য নেই। দেখবার ইচ্ছে হয়, তাকিয়ে দেখে মাঝেমাঝে। এতে বিশেষ কিছু ভাবতে চায়না সে। কবি মানুষ,  কবিতা লেখার ইলিমেন্ট তো একটা কিছু চাই। এতে কাউকে নিয়ে ভাবাটা তো আর তার জন্যে বিশেষ কিছু হতে পারে না,  সে তো আর তার কল্পনাকে মিশিয়ে নিতে পারে না বাস্তবতার সাথে। আর এটাকে সে কোন অপরাধ বলেও মনেকরে না।
কল্পনা? হ্যা দারুন কল্পনাপ্রবণ মানুষ বটে অরণ্য। যেই ঘটনাটার কারনে বাস্তবজীবনে কষ্ট ঘিরে ধরার কথা সে সেই ঘটনাটাকেই কল্পনার রঙ লাগিয়ে আনন্দ মিশিয়ে কিভাবে যেন বাস্তবের সাথে জুড়ে দেয়। তবে এটা কিন্তু তার দোষ বলা চলে না কারন তাকে কেউ কখোনো মনখারাপ করে থাকতে দেখেনি অথচ তার জীবনটার প্রতিটা পদক্ষেপেই মুদ্রার ওপিঠটা দেখতে হয়েছে। কিন্তু কিভাবে? কেমন করে?নাকি কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতার গুণেই?সে সেটাকেই আনন্দের বস্তু করে নিয়েছে। সাদাচোখে দেখলে ব্যাপারটাকে হাস্যকর বা পাগলামি মনে হলেও গভীরভাবে দেখলে কেবলি অবাক হতে হয়।
সে যাই হোক,  সন্ধ্যা নেমে এসছে। গূধুলিবেলার বাতাস এসে চুলে খেলা করে যাবার আগেই মেয়েটা ঘরে ফিরে যায়। অরণ্যও আর দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করে না। চলে আসে ঘরে।

কেন যেন আজকের দিনটা অন্য আর সব দিনের মত নয়। সবকিছু কেমন যেন অন্যরকমভাবে ঘটছে ।  কোচিং এ পড়তে এসছে অরণ্য। সেটা কথা নয়। অবাক করা বিষয় হল।  এখানে আজই প্রথমদিনের মত পড়তে এসছে প্রিয়ংবদা । হঠাৎ ঘোর লেগে যায় অরণ্যর চোখেমুখে। প্রথমবারের মত চোখাচোখি হয় দুজনের।নাম জানে প্রথমবারের মত। কিন্তু ঘোরের মায়ায় কোন কিছু ঠিক বসে না অরণ্যর মস্তিষ্কে। বাসায় ফিরেও ঘোর কাটে না তার কেবল তার সেই মুখাবয়ব আর তার নাম মাথার ভেতর পিংপং বলের মত লাফাতে থাকে। তবে কি? তবে কি সে ভালবাসে প্রিয়ংবদাকে?নাকি? না, এ কি করে সম্ভব?তবে এতদিন কেন মনেহয়নি?তবে কি সে আজই তার প্রেমে পড়ল? না, অরণ্য আর এ ব্যপারে ভাবতে  চায়না।  কিন্তু হায়! এ বিষয়টিকে তো সে কোনভাবেই মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিতে পারছে না। খুঁজে পাচ্ছে না কোন উত্তর। কখোন কখোন জানালা দিয়ে বারবার বাইরে তাকাচ্ছে খু্ঁজে বের করতে চাচ্ছে তাকে, এ কয়েক ঘন্টায় কেমন এক উদভ্রান্ত হয়ে গেছে সে। এ কি তবে ডোপামিনের খেলা? শরীরজুড়ে অচেনা শিহরন, হাতের আঙুলগুলো কেঁপে ওঠা, এক প্রাচীন উন্মত্ততা, কি মানে এসবের? ভেবেই আজকের রাতটা পার হয়ে যায় তার।

তবু ঘুমটা খারাপ হয় না।  আচ্ছা তার ঘুমের মাঝে স্বপ্নেও কি এসেছিল প্রিয়ংবদা? আবার এক ঝলক বাইরে তাকিয়ে নেয় অরণ্য। ওহহ, কি বিরক্তিকর! প্রিয়ংবদা! প্রিয়ংবদা!এই একটা নাম শুধু মাথার ভেতর ঘুরছে।  অরণ্য শান্ত হতে পারে না।কিছু একটা বোধহয় চিবিয়ে খাচ্ছে তার মস্তিষ্কটাকে। আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না। ভালবাসা, এটা ভালবাসাই।নিশ্চিত হয় এবার। কিন্তু করবে কি সে এখন? উন্মাদনা কাটে না তার।  নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।  কলেজে যায়। বিদুঘুটে অবস্থাটাকে আড়াল করে সে কোনভাবে। কিন্তু ঐ যে মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবনা! ওটা তো আর তাকে ছেড়ে যায় না। বরং অবদমিত হয়ে আরো দ্বিগুণ শক্তিতে বেরিয়ে আসতে চায়।

-দোস্ত একটা তো কাহিনী হয়ে গেছে।
-কি হইছে?
-দোস্ত একটা মেয়েরে ভাললাগছে।
-ও আচ্ছা।  তাইলে প্রোপোজ কইরা ফেলা।
-ধুর,  ক্যামনে কি?
-আচ্ছা শোন দেখছিস কৈ?
-আরে আমাদের সামনের বাসায় থাকে। কালকে কোচিং এ আসছিল। আমাার মাথা পুরা হ্যাং হয়ে আছে।
-মাথা হ্যাং করে লাভ নাই। সুন্দরমত যা,  কথা বল,  ধীরেসুস্থে প্রোপোজ কর। কন্ট্রোল ইওরসেলফ, ম্যান।
-তাইলে কথা বলব আজকে?!
-হুম,  কথা বল। দেখা যাক কি হয়।
-হু। কিন্তু দোস্ত কি বলব?
-ভাই তোর কি মাথা পুরা গেছে? আমি জানি? তুই কি বলবি?
-আচ্ছা বাদ দে এই টপিক।  আমিই দেখবনে।
-হুম।

পরিশ্রান্ত রৌদ্রজ্জল এক দ্বিপ্রহর। এ সময়টাতে ভালবাসা ঠিক আসে না। রাস্তার পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটার প্রায় সবগুলো ফুলই  ঝরে গেছে। তারপরও ধরে থাকা কতগুলো ফুল নড়ছে বাতাসে। কখোনো কখোনো ঝরে পড়ছে দু একটি পাপড়ি। সবগুলো ফুলই হয়তো ঝরে যাবে একসময়। অরণ্য জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছে সেই গাছটিকে। ভাবে ভালবাসাও কি এমন? কিছুটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য? তারপর ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায়, একটা সময়ে গিয়ে মিলিয়ে যায় শূণ্যতায়। গাছটি আবার কোন এক তপ্তরোদ ভরা গ্রীষ্মে যেমনি ফুলেফুলে ভরে ওঠে তেমনি হয়তো মানুষের মনে আবার জেগে ওঠে প্রেম।
একাকী বসে কবিতা লেখে অরণ্য-

তোমার বিদগ্ধ শূণ্যতায় বেঁচে আছি,
প্রতীক্ষা করছি কতগুলো শব্দ নিয়ে তোমার জন্য,
এক সুসুপ্ত গোধুলিতে তোমায় বলতে চাই ভালবাসি;
যখন এ প্রকৃতি থাকবে না বিষন্ন।

লাইন চারটে লিখেই আবার আনমনা হয়ে যায় সে। কলম চালাতে পারেনা,  ভাবতে পারে না নতুন কোন ছন্দ। কাগজটা ছোট টুকরো করে ছিড়ে নেয়।  আঁধার নেমে এসছে। কিভাবে সময় কেটে গেল তা বুঝতে পারে না অরণ্য। না,  আজ আসেনি ও। হয়তো প্রিয়ংবদা আজ বারান্দায় না আসায় তাকে আরো বেশি আনমনা মনে হচ্ছে।
হঠাৎ বইতে শুরু করে ঝড়োবায়ু। যেন উড়িয়ে নিতে চাচ্ছে সবকিছু।  শরীরে এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে হিমশীতল বাতাস আর নেশা ধরা মাটির গন্ধ যেন হৃদয়টাকে আরও বেশি শূণ্য করে ছিচ্ছে। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে তাকায় অরণ্য।  অজান্তেই চোখ চলে যায় সেই চারতলার বারান্দায়। প্রিয়ংবদা দাড়িয়ে আছে গ্রিল ধরে। আকাশ অতটা মেঘময় নয়।  জোছনার আলো পড়ছে মাটিতে। আর তার কিছুটা এসে পড়ছে ঠিক ওর মুখটার ওপর। ঝড়ো বাতাসে উড়ছে চুল। প্রকৃতি তাকে যেন আরো বেশি রহস্যময় করে তুলতে চাইছে। এমন এক আবছায়ায় প্রেয়শীকে দেখবার সৌভাগ্যই বা কজনের হয়।
"অন্ধকার এ রাতের ঝড়ো বাতাসে আবছায়ায় উড়তে দেখেছি তোর এলোকেশ,
স্নিগ্ধ শীতলতা নেশার ঘোর কেড়ে এ মনে এঁকে দিল প্রেমের আবেশ। "

একটু পরে বাতাস থেমে যায়। অরণ্য কোচিংএ পড়তে। ক্ষণিক বাদেই আসে প্রিয়ংবদা। আজ মুখোমুখি বসে ওরা দুজন। ক্লাস শুরু হতে দেরী আছে এখনও। কিছু বলতে চায় অরণ্য কিন্তু বলতে পারে না।বঝুতে পারে না সে বলবে কি? অরণ্যর এই দোদুল্যমানতা কাটিয়ে ওঠার আগেই প্রিয়ংবদা বলে ওঠে
-তোমার কাছে আগের রুলসগুলো আছে?
বিহ্বল হয়ে পড়ে অরণ্য মুহূর্তের জন্য। আবার সামলে নেয় নিজেকে। বলে,
-হ্যা,আছে। খাতাটা বের করে এগিয়ে দিতে যায়।
প্রিয়ংবদা বলে ওঠে,
-না, এখন থাক। এত অল্প সময়েতো তোলা পসিবল না। তুমি একটু ছুটির পরে ওয়েইট করতে পরবে? আমি জাস্ট ফটোকপি করে নেব।
-আচ্ছা ঠিক আছে। কোন প্রবলেম নেই।

কোচিং ছুটি হলে দুজন বের হয় একসাথে। পাশেই ফটোকপির দোকানে যায় ওরা। অরণ্যই নিজে খাতার পৃষ্ঠাগুলো ফটোকপি করার জন্য দেখিয়ে দেয়, ফটোকপি করা শেষ হলে আবার নিজেই গুছিয়ে ওর হাতে দেয়। দুজনে বেড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে এই শহুরে পিচঢালা পথ দিয়ে। বোধহয় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাটা ভেজা ভেজা। আবার কোন কোন জায়গায় ল্যাম্পপোস্টের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। এরকম পরিবেশে প্রিয়ংবদার হতটা খুব বেশি ধরতে ইচ্ছে হয় অরণ্যর।
-তোমার বাসা কোথায়?
-তোমার খুব কাছেই
-মানে?
-তোমার সামনের বাসা।
-ও মাই গড!  রিয়লি?
-হুম।  কেন বিশ্বাস হচ্ছে না!?
-তার মানে তুমি আমাকে আগেই দেখেছ।
-হ্যা, তিন বছর ধরে।
-ওহহো। থ্রি ইয়ারস্। বাট আমি তোমাকে দেখিনি একদিনও।
-সেটা জানি আমি।
-আচ্ছাআ....
-তোমাকে একটা কথা বলব?
-বল
-মাইন্ড করবে না তো?
-না না, তা কেন! বল...
-ভয় হয়...
-সেরছে, এমন কি বলবে যে ভয় হয়। বল না.....
-তুমি খুব সুন্দর।
হেসে ওঠে প্রিয়ংবদা।
-আচ্ছা তাই!
-তোমার হাসিটাও খুব সুন্দর।
তোমার ঐ হাসিতে বেঁচে থাকা যায় সারাটা জীবন
এক স্বপ্নময় নরকের সিড়ি ধরে আমি করতে রাজি ওতে আরোহন।
-তুমি কবি নাকি!?
-জানিনা।
-তবে এত সুন্দর কবিতা বানালে কিভাবে?
-জানিনা
-তুমি জানটা কি তাহলে।
-অনন্ত প্রেম আর নিঃসঙ্গতা।
-ও বাব্বা। তোমার কথা বুঝব না।
-তাহলে বোঝটা কি?
আবার হেসে ওঠে প্রিয়ংবদা।
দুজনে বাসার খুব কাছাকাছি চলে এসছে। অরণ্য ছেড়া কবিতাটা ওর হাতে গুঁজে দেয়।  তারপর দ্রুতপায়ে হেঁটে ঢুকে যায় বাসায়। আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে পারে না প্রিয়ংবদা।  ঠায় দাড়িয়ে থাকে কটা মুহুর্ত। কি ভেবে যেন খোলে কাগজটা। কবিতাটা পড়ে। নির্বিকার সে, ভাবে না বিশেষ কিছু। নাকি বা ভাবেই? তবে কাগজের ছেড়া টুকরোটা সে ছুঁড়ে ফেলে দেয় না, সযত্নে আবার ভাজ করে তার ব্যাগে রেখে দেয়। আবার ভাবে কি দরকার ছিল এভাবে যত্ন করে রেখে দেবার? আর ছেলেটার কথাগুলোরই বা মানে কি? এভাবে তো তাকে কেউ বলে নি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে হেঁটে এসে,  সিড়ি পেরিয়ে কখন যে দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে সে বুঝতেই পারে না।

অরণ্যের উন্মাদনাটা সরে গেছে। সে জায়গা এখন ভরে গেছে নিখাদ প্রেমে। সে ভাবে, প্রিয়ংবদা কি পড়েছে তার কবিতাটা? পড়লে ভাবছে কি ও? ও কি জানে ওর শূণ্যতা থেকেই কবিতাটা লিখিছে সে। না না, ও জানবে কিভাবে!? কল্পনার জগতে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় আবার সে। সেই কল্পনায় কি প্রিয়ংবদা আছ? ওর স্বপ্নের জগত তো বাস্তুবতা থেকে আলাদা।

সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেছে অথচ এখোনো সে বলতে পারে নি তার ভালবাসার কথা। দেখা হয়, প্রতিদিনই কথা হয়,  কোচিং শেষে একসাথে বাড়ি ফেরাও হয় প্রতিদিন কিন্তু তার না বলা কথাটি আর বলা হয়ে ওঠে না। অন্ধকার রাত আর তারাদের মিটিমিটি আলো পেরিয়ে নেমে আসে একটি দিন। ঘুম ভাঙে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে। এ শহর জুড়ে পাখি বলতে অবশ্য কাকই, এটাই বলতে গেলে একমাত্র পাখি। তবে এদিকটায় কিছু অন্য পাখি আছে এখোনো, কি পাখি তা বলা যাবে না,  কেননা তাদের শুধু  সকাল-সন্ধ্যার আলোহীন সময়টাতেই দেখা যায়। আজ ছুটি। তাই কলেজে যাবার ব্যস্ততা নেই।  ঘুমজড়ানো চোখে  বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় অরণ্য।  প্রিয়ংবদা এসে বসে আছে বারান্দায়।  চোখ পড়তেই ঘোর কেটে যায়। অপরূপা যেন পুরোপুরি মিশে গেছে প্রকৃতির সাথে।  সকালের আবছা সোনালী সূর্যালোক যেন ওর শরীরের সাথে মিলিয়ে গিয়েছে। চোখদুটো যেন আকাশ জুড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে থাকা মেঘের টুকরোগুলোকে গুনছে। ওর সুডৌল স্তনযুগল আর এদিক ওদিক থেকে ছুঁটে আসা সূর্যরশ্মিগুলো মিলে তাকে যেন এ অবনীর সবচেয়ে আবেদনময়ী নারী করে তুলেছে। নীলগেন্জী ভেদ করে থাকা সুশুভ্র ক্লিভেজ থেকে চোখ সরে না  অরণ্যর। মনেহয় সে যেন পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মেয়েটাকে দেখছে।
" তোমার দুচোখ স্বপ্ন দেখায় কোন এক নিঃশব্দ অবাক ভোরে
আর অন্তরীন বর্ণগুলো ক্রমশ আবেশিত করে দেয় আমাকে। "

বিকেলবেলা, কোচিং এ যেতে হবে, অরণ্য সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে। প্রিয়ংবদার বাসার গেটের দিকে তাকিয়ে আপেক্ষা করে। কখন বেরোবে সে। ক্ষণিকবাদেই ও কে বের হয়ে আসতে দেখে ।নীল জামায় দারুণ লাগছে ওকে। গেটেটা খুলে বেরিয়ে আসে।   কিছুটা এগিয়ে চোখাচোখি হয় দুজনের।
-কেমন আছো?
-ভাল। তুমি?
-এইতো ভালই আছি।
বাকিটা রাস্তা একসাথেই যায় ওরা দুজনে কিন্তু আর কোন কথা বলে না। অরণ্য একবার ভাবে- জিজ্ঞেস করব নাকি কালকের দেওয়া কবিতাটা পড়েছে  কিনা? আবার ভাবে -না থাক, যদি না পড়ে। আবার যদিবা  অন্য কিছু মনেকরে।  এদিকটাতে প্রিয়ংবদা ভাবে ও কি বলবে কালকের কবিতাটা খুব সুন্দর ছিল। নাকি ওকে হাতে সেই কগজের টুকরোটা তুলে দিয়েই বলবে একথাটা। কিন্তু ছেলেটা মন খারাপ করতে পারে একথা ভেবে সেও পিছিয়ে যায়।

একসাথে ঢোকে দুজন কোচিং এ ।  কোন কথা বলে না কেউ। আজও দুজন বসে সামনাসামনি।  অরণ্য তাকিয়ে আছে অন্যদিকে কিন্তু আজ প্রিয়ংবদা  দেখছে ওকে। নিপাট শ্যামবর্ণ, এলোমেলো চুল, বড়  করে ট্রিম করা দাড়ি, খানিকটা ক্যাজুয়াল ছেলেটা,  তবে স্মার্ট বেশ।
ও তোমরা এসছ। রিকার্ডো স্যার আছ আসে নি। ওনি খুব অসুস্থ। সো,  তোমাদের আজকের ক্লাসটা অফ থাকবে।
ওকে স্যার।

কোচিং থেকে বেরিয়ে আসে দুজন।  সামনে এগোয় না কেউ আর,  ঠায় দাড়িয়ে থাকে।
-বাসায় চলে যাবে এখন?
-ওহ, এই টাইমটাতে না বাসায় থাকতে খুব বোরিং লাগে।
-তা করবে কি এখন?  চল ঘুরে আসি।
কিন্তু...
-কি?
-আচ্ছা যাবে কোথায়?
-চল লেকটার ওখানে যাই।
-হ্যা, যাওয়া যায় ;এই ওয়োদারে প্লেসটা অনেক চার্মিং হয়। চল যাই।
-আচ্ছা চল সামনে থেকে রিকশ্  নেব।
না হেঁটেই চল। সময়টা তাড়াতাড়ি পাস্ হবে।
-সময় তাড়াতাড়ি পাস্ হবে, নাকি আমার সাথে  রিকশয় উঠতে চাইছ না?
সামলে নেয় নিজেকে অরণ্য, এটা কি বলে ফেললাম ভাবে মনেমনে।
এদিকে প্রিয়ংবদা অকস্মাত অরণ্যর একটা হাত জড়িয়ে নেয় বাহুডোরে, তারপর হাঁটতে শুরু করে।  কিছুই বুঝতে পারে না অরণ্য।  এ কয়দিন কল্পনার রাজ্যে থাকলেও,  সে কখোনো ভাবতে পারে নি বাস্তবে প্রিয়ংবদা তাকে বাহুডোরে বেধে নেবে। একি কল্পনা! না,  তা তো নয়।  সত্যিই বাহুডোরে বাঁধা এক জুটি হাঁটছে এই পিচঢালা পথ দিয়ে।

লেকের পাড়ে গিয়ে ওরা বসে পাশাপাশি। প্রিয়ংবদার চুল থেকে আসা সুগন্ধ অরণ্যকে মাতাল করে দিতে চায়।
-আজকের আকাশটা দেখেছ?
-কেমন এক রহস্যঘন মেঘ হঠাৎ সূর্যটাকে ঢেকে ছিচ্ছে আবার সরে যাচ্ছে নিমিষেই। সোনালী আভাগুলো খেলছে আমাদের চারিপাশে। তোমার এলোকেশে বয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির ছোয়া মাখা বাতাস।
-তোমার এত রোমান্টিকতা আসে কোথা থেকে?
-এত অপরূপ এক নারী পাশে থাকার পরও যদি রোমান্টিকতা কারো না আসে তবে সে তো নিশ্চিত পাথর। প্রেমিকার রহস্যময় ঐশ্বর্যেই তো লুকিয়ে থাকে কবির কবিতা।
-আমিতো তোমার প্রমিকা নই।
-"শেষের কবিতা "পড়েছ?
-হ্যা, তবে কি তুমি মিন করছ তুমি অমিত রায়ের মত। সব মেয়ের সাথেই রোমান্টিক।
-না, ঠিক তেমনটা হয়তো নয়। আসলে নিজেকে ডিফাইন করাই সবচেয়ে কঠিন।
-তা হবে হয়তো। প্রেম করেছ?
-না তো।
-এতটা অবাক হলে যে? কাউকে ভালবাসনি কখোনো?
-এতটা জেনে কি করবে?
-সরি, বলতে না চাইলে থাক।
-না,  ঠিক আছে। সময় হলে জানবে। তুমি ভালবাস কাউকে?
-না, বাট তুমি যেহেতু আমার কাছ থেকে আন্সার পেয়েছ, সো দ্যাট আমি তোমার কাছ থেকে আন্সার বের করেই ছাড়ব।
-তাতে আমারও বেশ সুবিধাই হবে।
-মানে?
-না,  কিছুনা।
-কিছুতো একটা অবশ্যই।
-আরে বাদ দাও না। সময় হলে সবই জানবে।
-কবে সময় হবে?
-খুব শীঘ্রই।
-হুম,  সেটা কবে?
-ওহহো
-কালকে!!!  ঠিক আছে?
- মানে কি? এত তাড়াহুড়া কেন?  আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি?
-উহহ, তোমার কোন কথা শুনব না আমার কালই আন্সার চাই।

সন্ধ্যা নেমে আসছে  ওরা লেকের পাড় ছেড়ে ওঠে বাসায় যাবার জন্য। অরণ্য রিকশ্ ডাকে। প্রিয়ংবদা এবার আর বাঁধা দেয় না। দুজনে রিকশ্ তে উঠে একটি কথাও বলে না। অরণ্য কিছু বুঝতে না পেরে ঘোরের ভেতর হারিয়ে যায়। আর প্রিয়ংবদা যে মেয়েটা কিনা আজ পর্যন্ত কোন ছেলের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে,  কখোনো ভাবে নি এসব ব্যপারে, সেই মেয়েই আজ কারো হাত ধরে হাঁটল প্রথমবারের মত , কারো সাথে লেকের পাড়ে পাশাপাশি বসল প্রথমবারের মত, কারো সাথে রিকশয় ঘরে ফিরছে প্রথমবারের মত। তবে কি একটু একটু করে প্রেম দানা বাধতে শুরু করেছে ওর অন্তরে। ওসময় এত করে কি শুনতে চাইছিল সে অরণ্যর মুখ থেকে।
অরণ্য কি ভাবছে সে কি এখনো কল্পনায় ডুবে আছে নাকি ভাবছে বাস্তবতা নিয়ে। এই গোধুলিবেলায় একসাথে ঘরে ফেরাটা হয়তো তার স্বপ্নের জগতেও ছিল সে কি আজ বাস্তবে উপভোগ করতে পারছে একে?
"একজন নীলাঞ্জনাকে আমি দেখছি এই  এক গোধূলি লগ্নে
তার সুশোভিত কেশপুঞ্জে ঝুলেআছেএকগুচ্ছ লাল কৃষ্ণচূড়া,
প্রথমবার সে এসেছিল অসাড় এক পূর্বাহ্নে
তার এই সুররীত ঠোটদুটো যেন এক রক্তজবা।
আমি ওকে দেখেছি একান্ত নির্জনে,
আমি শুধু চেয়ে থেকেছি নির্বাক মনে। "

বাসার থেকে কিছুটা দূরে থাকতেই রিকশ্ থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে ওরা। সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। চাঁদের পূর্ণিমা না থাকলেও আলোটা বেশ ঝলমলে।
-শোন আটটার দিকে বারন্দায় আসবে কিছুক্ষণের জন্যে।
-কেন?
-না, এমনিই।
-না, এক কাজ কর ছাদে এসো।
-রাতেরবেলা ছাদে আসবে?!
-কেন ভুতের ভয় পাও নাকি আবার?! খলখল করে হেসে ওঠে মেয়েটা।
-না, আমি ওসব বিলিভ করি না। বাট তোমাকে আসতে দেবে তো?
-ছাদে আসতে না পারলে বারান্দায় আসব, হল এবার।
-আচ্ছ ঠিক আছে।
-শোন তুৃমি রোডে পরে ঢোকো। আমি বাসায় যেয়ে নিই। বাসায় জানতে পারলে যে কি হবে? বাইইই। সী ইউ।
-আরে কিছু হবে না।ডু সামথিং রং বি কনফিডেন্ট। বাই।
প্রিয়ংবদা এসে বাসায় ঢোকে। একটু পরে অরণ্যও চলে যায় নিজের বাসায়। দিনটা আজ এখন পর্যন্ত বেশ ভালই কাটল। বাসায় কেউ নেই।  একটা সিগারেট ধরায় অরণ্য।  একয়দিন শান্তিতে সিগারেট খাওয়া হয়ে ওঠে নি। কবিতার ডায়রিটা নিয়ে এসে বসে। নতুন কবিতা লেখে না,  শুধু পুরোনো কবিতাগুলো পড়ে যায়।
কবিতা পড়তে পড়তে কখন যে সময় কেটে যায় অরণ্য বুঝতেই পারে না।  ঘড়ির দিকে তাকায় - আটটা দশ বাজে। তাড়াতাড়ি উঠে জানালা দিয়ে উকি দেয়,  ভাগ্য ভালো ও ছাদে যায় নি। বারান্দায়ই দাড়িয়ে আছে। তারপর শান্ত পায়ে হেঁটে বারান্দায় যায়।  আপলক দৃষ্টিতে দেখতে পারছে না ওকে। কাল কি করবে সে? বলবে কি প্রিয়ংবদাকে? ভাবতে থাকে অনেকক্ষণ এরইমধ্যে ও যে কখন ঘরে চলে গেছে সেটা সে খেয়ালই করে নি। কিন্তু এত ভেবেও কোন কিছু বুঝতে পারে না তবে কি সে জানাবেই নাকি অপেক্ষা করবে আরও কটা দিন।  কিন্তু সেটাই বা কি করে সম্ভব হবে প্রিয়ংবদাকে তো কালই উত্তরটা দিতে হবে। কিছু ভাবতে পারে না সে।  আরেকটা সিগারেট ধরায়।
ছেলেটা এমন কেন? মানুষ কি এতটা রহস্যময় হয়? সবকিছু থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা মানুষটাকে কি চেনা সম্ভব,  না তার মন বোঝা সম্ভব?  ও কি ভালবাসে আমাকে নাকি বাসে না? নাকি ও নিজেই জানে না আমায় ভালবাসে কি না? যেমনটা আমি। আমি অবশ্য জানি, জানিনা বললে ব্যপারটা মিথ্যেবাদিতা হয়েই দাড়ায়। একয়দিনে অনেকটা ভালবেসে ফেলেছি ওকে। ব্যকুল হয়ে আছি ওর মুখ থেকে ভালবাসি শব্দটা শোনার জন্য। কিন্তু আমি জানিনা আমি ওকে ভালবাসি কথাটা বলতে পারব কিনা। কাল যদি ও আমায় বলে দেয় ওর ভালবাসার কথা, তবে? আমি ওকে ফিরিয়ে দেব কিভাবে? কিন্তু আমি যে তোমার ভালবাসা গ্রহনের জন্য প্রস্তুত নই,  প্রিয়তম।  আমি কিভাবেই বা কষ্ট দেব ওকে? বিকেলবেলা নিজের বলা কথাগুলোর জন্যে অনুশুচনা হয় ওর। কিন্তু আর কিই বা করতে পারত সে, ভালবাসাতো আর কাঁচ ঘেরা ঘর দিয়ে বিবদ্ধ করে রাখা যায় না। যদি তাই সম্ভব হতো তবে আর ট্রয় নগরী ধ্বংশস্তুপে পরিনত হতো না, শাহজাহানকেও রাজকোষ খালি করতে হতো না তাজমহল তৈরির জন্য। সে তো সহজাতভাবেই বলে ফেলেছে কথাগুলো। আর অরণ্যর রোমান্টিকতা তো তাকে আর সামলাতেই দেয়নি নিজেকে। এমন কাউকে ভাল না বেসে কি থাকা যায়।

এরকম এক নিশুতি রাতে দুজন সদ্য কৈশর পেরিয়ে যৌবনে পা দেওয়া তরুণ - তরুণী ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে। জীবনের একটা দিক ওদের কাছে আবার নতুন করে ফুটে উঠছে। ঝপঝপ করে বৃষ্টি নামে। তার সাথে ঠান্ডা বাতাস।  বারবার এসে শিহরণ জাগিয়ে যায় শরীরটা জুড়ে। প্রিয়ংবদার ঘরের লাইটটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে সে অথবা ঘুমিয়ে পড়বে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। অরণ্য জানালাটা খুলে দেয় জানালা দিয়ে বৃষ্টিটা ঘরে ঢুকছে না। বুকভরে নিঃশ্বাস নিয় ঘুমোতে চলে যায় এই রাতের নিসঙ্গতাকে সঙ্গী করে।
"আজ আরও বেশি ভালবাসতে ইচ্ছে করছে তোমায়
রাতের তারাগুলো আমায় একা ফেলে যাওয়ায়,
আরও বেশি ভালবাসতে ইচ্ছে করছে তোমায়
জমে থাকা কথাগুলো ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে বৃষ্টির প্রতিটি ফোটায়।"



ভালবাসাটা যেন এক অপরিচিত খেলায় রূপ নেয়। যেন এমন কিছুটা একটা তারা দেখে নি কখনো। না অরণ্য তার উত্তর তৈরি করতে পারে, না প্রিয়ংবদা সে উত্তরের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে। গত কটা দিন অরণ্য আর সেই চারতলার দিকে তাকায় নি একটিবারের জন্যও। প্রিয়ংবদাও আসে নি বারান্দায়। এমনকি দেখা হবে বলে দুজনে কোচিং এ আসাও বন্ধ করে দিয়েছে। কি চায় ওরা? নিজেদেরকে কি নিজেরাই চিনতে পারছে না? নাকি কোন এক অদৃশ্য পর্বত বাধা  হয়ে আছে ওদের মাঝখানে? গাঢ় কালো অন্ধকারে তাদের প্রেম কেবলই ধূমায়মান হতে থাকে। যেন একদল নিশাহর হারিয়ে ফেলেছে ওদের পথ গুহার ভেতরেই।


-কিরে তোর কি খবর?
-এইতো ভালই।
-কোথায় ছিলি একয়দিন? কলেজে আসিস না ফোন অফ? অনলাইনের কথা বাদই দিলাম, অনলাইনে তো তোকে আমি গত দুই বছরে কবারমাত্র দেখেছি?
-ছিলাম আরকি। তোর কি খবর?
-তা ভাল। তোর ওদিককার খবর কি? বলছিস কিছু? কিরে, আবার ছ্যাকাঠ্যাকা খেয়ে যাস নাই তো?
-আরে না।  অন্য কাহিনী হইছে।
-কি?
-সি আক্সড মি, ইফ আই লাভ এনিবডি?
-ওহহ। হোয়াট এন অপচুনিটি? কি বলছিস?
-কিছুই বলি নাই।
-বোকাচোদা। এই চান্স মিস কইরা ফেললি।
-না মিস হয় নাই।
-তো বল না,  তাড়াতাড়ি করে। এমনে বসে আছিস কেন?
-হুম বলব,  বলব।
সন্ধ্যায় ফ্রি আছিস?
-হু, কেন?
-বারে যাব আজকে, চল।
-আচ্ছা ঠিকাছে।  যাবনে।
-তোর ফোনটা অন রাখিস সন্ধায়।  তুমি যে চিজ।
-আরে ফোন অন রাখবনে,  টেনশন নিস না।
-আচ্ছা তাইলে সন্ধ্যায়।
-ওকে।

এদিকটাতে প্রিয়ংবদা চাইছে সবকিছু ভুলে থাকতে। কিন্তু ভুলে থাকার চিন্তা করতে গেলেও তাকে ওর নামটাই চিন্তা করতে হয়।  কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে। কিন্তু বুঝতে পার সিদ্ধান্তে না আসতে পারলে যে সবকিছু গোলমেলে হয়ে যাবে।
একটাপর্যায়ে ঠিক করে নেয় সে,  গ্রহন করবে তার ভালবাসা।  এভাবে অবিরত নিজের সাথে    প্রতারনা করার চেয়ে সত্যটাকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ করাও সহজ। আর পারছে না সে। আজ সে কোচিং এ যাবে। যদি ও ভালবাসা কথা এসে বলে তবে তা গ্রহন করবে নির্দ্বিধায়। নয়তো নিজেই গিয়ে বলবে তার ভালবাসার কথা।


-হ্যালো।  বের হচ্ছি তুই কে?
-আমি যাচ্ছি।  তুই সরাসরি চলে আয় এখানে।
-ওকে । কেউ আছে তোর সাথে?
-না। এসে দুইতলায় যাস। দোতলায় বসব।
-আসতেছি।
অরণ্য বসা থেকে বেরোয়। একটা ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি চলে যায় ওখানটায়। ওখানে কথামত দোতলায় গিয়ে রবির সাথে মিট করে,  তারপর টেবিলে গিয়ে বসে।

-ক্যান আই হেল্প ইউ, স্যার?
-অও, এ্যা মনকি-৪৭ ৭৫০এমএল ড্রাই জিন এন্ড এ্যা বোটল সোডা, প্লিজ।
-ওকে স্যার, থ্যাংকইউ।
-ভাই, তুই সারাক্ষন জিন খাস কেন রে ভাই, আমারে একটু বুঝাবি?
-এই ভেজাভেজা ওয়েদারে ড্রাই জিন না হলে জমে নাকি?
-হ, বুঝছি।

ওয়েটার এসে সার্ভ করে যায়।

-নে, পেগ বানা।

রবি পেগ বানাতে থাকে। পানশালার লাল নীল আলোতে কেবলই চোখ ধাঁধায়।  পুরো পৃথিবীটাকে ভুলে থাকার এক মোক্ষম জায়গা। অরণ্য একটা পেগ তুলে নেয় এসব ভাবতে ভাবতে। এক্সট্রা কিছু আইস যোগ করে। একটা চুমুক দিয়ে সে,  গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে থাকে একমনে। ভাবে কোনকিছু। কতবছরের পুরোনো এই মদটা?  জানে কি সে?যে যতটা পুরোনো হয় সে মদ তত বেশি অমরত্ব লাভ করে। ভালবাসা কি মদের মত নাকি এর উল্টোটা? প্রশ্নটা,  নিজের মস্তিষ্কেই প্রতিফলিত হয়ে আবার ফিরে আসে। তা ভাবতে ইচ্ছে করে না তেমন কিছুই আর। হঠাৎ করে মনে পড়ে প্রিয়ংবদার কথা।  ও কি করছে।  ভাবছে কি সে? ও কি রাগ করেছে তার ওপর?  মেয়েটার সাথে এমনটা করা কি ঠিক হল? ওকে অন্তত কিছুএকটা বলে তো বোঝানো যেত? ওকে কি কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমি? যখন মেয়েটা এতটাই কাছে এসে পড়েছিল তখন তাকে অবহেলা করে হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিটা নেয়ার কি বা প্রয়োজন ছিল? কিন্তু এটা তো করতে চায়নি সে? কিভাবে যে কি হল কিছুই বুঝছে পারে না সে। একবারে বাকি পুরো পেগটা গলায় ঢেলে দেয়। এক বিস্তৃত অনুশোচনার আগুন পুড়িয়ে দিতে চায় ওর পুরোটা হৃদয়।  এই দহন যেন সহ্য করতে পারছে না সে। একের পর এক পেগ মারতে থাকে পাগলের মত। বুকের ভেতরের সেই আগুনটাকে মনেহয় কেবল এ্যালকোহলই নেভাতে পারে।
রবি এসে বাসায় দিয়ে যায় ওকে।

এদিকে প্রিয়ংবদা কোচিং এ গিয়েছিল আজ।  আজ ওর চোখ সারাটাক্ষন খুঁজে বেরিয়েছে অরণ্যকে। কিন্তু ওর শূণ্যতা ওর অন্তরের চারপাশটাকে আরো আচ্ছাদিত করে দেয় বেদনার আবেশ দিয়ে। আরেকটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিল, জানতে পারল ও আসছে না এখানে কদিন ধরে। কি হল তবে? কতবার সে তকিয়ে দেখে ওপরে অরণ্যর ফ্লাটের দিকে কিন্তু একটিবারও তো দেখা পায় না তার। ওর কি হল? ও কি নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইছে আমার কাছ থেকে? আমি কি করলাম তবে? আমার কি বাড়াবাড়িটা খুব বেশি হয়ে গিয়েছিল।  বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করে সে। এই মেয়েটা তো আর কখোনো কাঁদেনি বড় হবার পর থেকে। তবে আজ কেন কাঁদছে?  বিরহ বেদনা কি সে সইতে পারছে না? নাকি ভালবাসাটাকে হারিয়ে ফেলার ভয় পাচ্ছে? পেছন থেকে ওর মা এসে গায়ে হাত রাখে। ওর মা সাধারনত কখোন ওর ঘরটাতে হঠাৎ হঠাৎ আসে না কিন্তু আজ কি মনেকরে ঢুকে পড়ল।
-কিরে ,  কি হয়েছে তোর?
প্রিয়ংবদা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদা শুরু করে আরও বেশি।
-আরে বলবি তো কি হয়েছে?
প্রিয়ংবদা কান্না কিছুটা আয়ত্তে আনতে পারে।
-বলব, রাগ করবে না তো?
-না মা, তোর উপর আমারা রাগ হয়েছি কখনো। বল কি হয়েছে?
-মা একটা ছেলেকে আমি ভালবাসি।
মা হাসতে আরম্ভ করে জোরে জোরে। প্রিয়ংবদা কিছু বুঝতে পারে না।
-তো কি হয়েছে। কে ছেলেটা? বলেছিস ওকে,  ও কি ভালবাসে তোকে?
-আমাদের সামনের বাসায় থাকে। কোচিং এ দেখা হয়েছিল।
-হয়েছিল কি রে? এখন দেখা হয় না। আজও কোচিং এ তো গেলি তুই।
-ও নাকি আসছে না কদিন ধরে।
-আচ্ছা ওকে কি বলেছিস তুই ওকে ভালবাসিস?
-না এটা বলিনি।
-তাহলে কি ও জানে না?
-জানি না।
-কথা এত রহস্য করে বলছিস কেন রে? তুই কাঁদছিলি কেন সেটা সোজাসুজি বল তো।
-মা,  ওদিন আমি ওকে ফোর্স করে জিজ্ঞেস করেছিলাম ও কাউকে লাভ করে নাকি? এন্ড এটাও বলেছিলাম আমাকে একদিনের মধ্যে আন্সার দিতে হবে। এরপর ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। তাই ওর সাথে আর কোন কন্টাক্ট করি নি একয়দিন। আজ ভাবলাম যাই হোক কন্টাক্ট করব।  গিয়ে শুনি ও আসছে না এ-কদিন।আর আগে আমার জন্য বারান্দায় এসে দাড়িয়ে থাকত,  এখন আর আসছে না। ও কি আমার থেকে লিভ চায়?...
-তুই কি যে সব উল্টাপাল্টা কাজ করিস। ভয়টা আবার কিসের! এত কিছু হয়ে গেছে আমাকে তো বলিসইনি কিছু। আর তোকে কে বলেছে যে ও তোর জন্যে বারান্দায় এসে দাড়ায়?
-ও নিজেই বলছে।
-আচ্ছা শোন এরকমভাবে কান্নাকাটি করিস না। এমনও তো হতে পারে ছেলেটা খুব অসুস্থ। এত টেনশন করিস না তুই। তুই যদি ওকে ভালবাসিস তাহলে তুই ওকে পাবি যদি তুই চাস। মনেরাখিস মানুষ যা চায় তাই পায় হয়তো সময়টা আগেপরে হয়।
-মা.......
-হয়েছে।  আয় তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিই আজ। কতদিন তোর পাশে ঘুমাই না।

আকাশে উঠেছে নতুন চাঁদ, আলোটা খুব অল্প। বাতাসে দোল খাচ্ছে তারগুলো। গুটিকয় তারা ভেসে উঠছে মাঝেমাঝে। ওদের কয়েকটা আবার হঠাৎ করেই ছিটকে পড়ছে ধরনীর বুকে ।  এটা কি?  এর ভেতর কি লুকিয়ে আছে কোন গূর রহস্য। পৃথিবীর প্রতি ভালবাসর টানেই কি ওরা ছুটে এসেছে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে নাকি ওদের বিচ্ছেদ হয়েছে নভোমন্ডলের সাথে? কিন্তু যাই হোক না কেন ওসব তারারা পৃথিবীর বুকে জায়গা করে নেবার আগেই তো জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়, যদি বা কখোনো এ পৃথিবীকে জড়িয়ে ধরতে পারে তখন হয়ে যায় মহাপ্রলয়,  এই পৃথিবী পর করে দেয় অন্য সবাইকে।

অরণ্যর ঘুমের মাঝে এক স্বপ্নে আসে প্রিয়ংবদা, সেদিনের মতই ও বাহুডোরে বেঁধে রেখেছে তাকে। কিন্তু পথটা সেদিনের মত শহুরে ইটকাঠে ভরা পিচঢালা পথের মত নয়। এক স্নিগ্ধ পাহাড়ি গ্রাম আর তার মাঝের উপত্যকা চিড়ে চলে যাওয়া এক সর্পিল নদী  যেটা নেমে এসেছে ঐ দূরের কোন এক পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে। তার পাড় ধরে হাটছে দুজনে। হেমন্তের হালকা কুয়াশা ঢেকে রেখেছে দূরের গ্রামটাকে আর ছোট ছোট ঘাসের ওপর জমে থাকা শিশির মাড়িয়ে খালি পায়ে হাঁটছে দুজন। একটা ঘাসফড়িং এসে  বসে থাকে ওর এলোচুলে, দেখে মনেহয় যেন ওটা ওর টিকলী, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে তুলতে চাইছে সব কিছু। সে কটা বুনোফুল ছিড়ে হাটু গেড়ে ওর সামনে, সহাস্য প্রিয়ংবদা তুলে নেয় ওর হাত থেকে সে ফুলগুলো। তারপর দৌড়ে হারিয়ে যেতে চায় বুনো মেঠো পথে।

বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬

ইলিনয় আর আমার এথেনা অধ্যায়ের সমাপ্তি

ইলিনয় আর আমার এথেনা অধ্যায়ের সমাপ্তি
✍নশ্বর নিটোল
এথেনা ,তোমার জন্যে ওডিয়ুসের আগুনে আজ বিদ্ধস্ত এ নগরী,
এথেনা ,তোমার উপহার এনে ডেকে এনেছি নিজেদের পরাভব,
এথেনা, তোমার জন্যে ইলিনয় আজ নিস্তব্ধ বধ্যভূমি,
সম্মোহিত ঘোড়ার গর্ভ হতে সৈন্যরা এসে ভেঙে দিল দূর্গের দ্বারগুলো সব।

এথেনা ,আমার এ সহস্র বছরের ভালোবাসা একরাতে করে দিলে ছারখার,
তোমার কি নিভিয়ে দেবার ক্ষমতা ছিলো না সাইসনের মশালের আগুন?
তুমি কিভাবে পারলে এ রাতে নিদ্রারত হতে?
তোমায় কি একটুকুও স্পর্শ করে গেল না এ ভয়ংকর টাইফুন?
এথেনা, তুমি দেখেছ, সারাটা ট্রয় আজ জ্বলছে,
তুমি দেখছ ,কিমাসুইসের ছোট্ট হাতটা হাত বাড়িয়ে ওর মাকে খুঁজছে,
তুমি দেখেছ, বিয়ের আসরে ছাই হয়ে গেছে রেটমন-অলডিরা।
এথেনা ,আমি তোমায় আর ভালবাসি না,
ভুলে গেছি সহস্র বছর।
শুধু ভুলব না বিশ্বাসঘাতকতা তোমার ।
জানি আজ আমি পরাস্ত সৈনিক_ ঈনিয়াস,
তবু দেবী ,তবু সে ভালবেসে বাড়িয়ে দিয়েছে তার হাত,
আফ্রোদিতি, দেবী ,তোমাতেই আমি খুঁজে নেব দগ্ধ নগরীর নতুন প্রভাত।

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

একজন বেশ্যা আর তার প্রেমের গল্প

একজন বেশ্যা আর তার প্রেমের গল্প



নশ্বর নিটোল

এলাকাটা বনানীতে পড়লেও সেটা শুধু নামেই । খুব ঘিঞ্জি এলাকাটা , ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে থাকা দুই পাশের রাস্তাটাও বেশ সরু। এই জায়গায় ভদ্রলোকেরা পা না মাড়ালেও । কালোকাচওয়ালা গাড়িগুলো এদিকটাতে বেশ দেখা যায় ।চ্যালারা এসে তুলে নিয়ে যায় ।

এই বেশ্যাপল্লীর অন্ধকার জগতের বাসিন্দা সোহানা। তার পৃথিবী বলতে এই অন্ধকার গলি ,কালোকাঁচের গাড়ি , আর কিছু চেনা অচেনা ফ্লাটবাসা আর হোটেলের রুম।জন্ম থেকে এসবই সে দেখে এসছে। পেটপুড়ে খেতে পেয়েছে , অবশ্য টুকটাক দুচারটে অন্যকিছুও যে খেতে হয়নি তাও না। বাইরের পৃথিবীটাকে দেখেনি বলেই হয়তো মনে তেমন কোন চাওয়া জন্মে নি। সারাদিন কত খদ্দের আসে ।আবার চলে যায় ।কেউ কেউ নিয়মিত । তবে একজন আসে.... সবার থেকে আলাদা সে । অন্যদের মত সবকিছু কাগুজে নোটে মোড়ানো নয়। বন্দী জীবনের আকাশে যেন একটুকরো মেঘের মতই মনেহয় । ভালোবাসা , প্রেম এসব মানবীয় কামনাকে তো পিশাচ দালালগুলি দেয়াল দিয়ে আটকে রাখতে পারে না!

~কি খবর তোর ?এদ্দিন কৈ ছিলি? জানস না তোর জন্যে প্রতিদিন বইসা থাকি ।
~ খাইছে !!! মাগীর কথায় তো আমি পুরাই......... সে আমার অপেক্ষায় থাকে
~দেখ, তুই আমারে মাগী কইবি না
~আহারে !! শখ কত! মাগীরে মাগী বলব নাতো কি বলব শুনি?
~দেখ , অন্যেরা সবাই কইলেও কিছুই না কিন্তু তোর মুখ থেইকা আমি এই কথা শুনতে পারি না। মনেলাগে বহুত....
~কৈ লাগে বললি???
~মনেলাগে। বুকের ভিতরে ছিড়া যায়
রায়হান বুকে হাত দিয়ে বসে।তারপর ...................................................................
~ঐ তোর কাজকাম কেমন চলে রে?
~হাহাহাহাহা
~হাসতাছস কেন?
~তোর প্রশ্নের কারণেই হাসি ? আমার নাকি আবার কোন কাজকর্ম আছে ......হাহাহাহাহাহা
~দেখ ,আজাইরা পেচাল পাড়বি না । কাজকাম করস না এত বেডাগুলির কাছে যে এতগুলি পয়সা ঝাড়স ঐগুলি কি হাওয়ায় ভাইসা আহে নাকি ?
~হাওয়ায় ভাইসা আসে নাকি পানিতে ভাইসা আসে তা জানলে তোর লাভ কি? চুপ থাক।
~কিরে যাবি গা?
~হু , রাতে আসবনে আবার ।রেডি থাকিস।

রায়হান স্যাতস্যাতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। গন্তব্য , ছুলার মাঠ। রাজিব ভাই ডাকছে কি না কি কাজ করা লাগবে । নিশ্চয় কারো হাত ভাঙো,পা ভাঙো,হুমকি দেও আরও কত কি। অথচ এই রায়হায় ছেলেটা ছিলো কি? বড় পদে বসা বাবার কালো টাকার সাপ্লাইয়ে বেশ ভালোই ছিল । লেখাপড়ায়ও খুব একটা খারাপ ছিলো না অন্যান্য গড়পড়তা ছাত্রদের চাইতে বেশ মেধাবিই ছিলো । বয়সের দোষে ভালবাসতে শিখেছিল।হায়রে ভালোবাসা !!!!!!............শেষমেষ প্রত্যাহত হয়ে ।সিগারেট,গাঁজা ,মদ, ইয়বাটাও ধরল শেষ পর্যন্ত । বাসায় জায়গা হয়নি ঠিক তা না। রাগারাগি করে ঘর ছেড়ে আসার দিনই বাবা চলে গেল । হয়তোবা একমাত্র ছেলের এমন অবস্হা সহ্য করতে পারেন না। এত কিছু নিয়ে মাও শেষে গ্রামেই চলে গেলেন । রায়হান দুইবার গিয়েছিল গ্রামে মাকে দেখার জন্যে ।দেখা হয়নি মা আসনি ওর সামনে । তারপর রায়হান ভাবে ভালই হয়ে এ মুখে মায়ের সামনে দাড়াবেইবা কিভাবে । তবুও হৃদয়টা যেন খা খা করে ওঠে ।
ছুলার মাঠে এসে পৌঁছে সে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতেই।

~ছেলামালাইকুম ভাই ।
~শোন একখান সিল ফালাইতে হইবো ।
~কি কন ভাই । ছোটখাটো লুক আমি ।নতুন আইছি। সিল কেমনে ফালামু।
~এই শালা বেশী পকরপকর করস ক্যা ,অ্যা? শোন টেকা, বিশাল টেকার কাজ।সত্তর লাখ ।চিন্তা করবার পারস? তর চল্লিশ আর আমার তিরিশ ।
টাকার অঙ্কটা শুনে চোখটা এক ঝলক মেরে আসে রায়হানের। ভয়গুলো নিমেষেই কেটে যায় । মইন দালানকে লাখ দশেক টাকা ধরায় দিয়ে সোহানাকে নিয়ে বাকি টাকার বেশ ভালো একটা ব্যবস্থা করে নিতে পারবে এমনটাই চিন্তা করে মনেমনে।
~কিরে কি ভাবস এত ।টেনশন নিস না।বিকালে আমার বাসায় আইসা জিনিস আর এডভান্স কিছু নিয়া যাইস।
~ঠিকাছে ভাই ।

রায়হান যেন আজকে এক অন্তিম আনন্দ পেয়ে গেছে । ছুটে যায় আবার সেখানে , সোহানার কাছে ।

~ঐ সনু আছস?
~কিরে তোর কি হইছে রে?
~আরে আর আমাদের বেশি দিন এমনে থাকা লাগব না।
~ক্যা কি হইল আবার ?তর কি মাথা খারাপ হইয়া গেলো নাকি ?
~আরে না ।দেখিস দুই দিনপর তরে আমি এইখান থেইকা নিয়া যামু।
সোহানা বুঝতে পারে না। হঠাৎই মনে একটা ভয় কাজ করে। কিন্তু আসলে ভয়টা যে কিসের সেটা সে নিজেই আন্দজ করতে পারে না।
~সনু এখন আমি যাই রে ।এরপরেরবার যাওয়ার সময়ে তোরে নিয়াই যামু।

রাজিব ভাইয়ের বাসায় গিয়ে কলিংবেল দিতেই দরজা খুলে দেয় রাজিব ভাই ।
~আয় রায়হান ভিতরে আয়।
এই ল জিনিস ।টার্গেট জানি একদম মিস না হয়। আর এইখানে পাঁচ আছে বাকিটা কামের পরে। ঠিক জায়গামতন ফালাবি। কি কথা বুঝছস?
~জ্বি ভাই ।
~এহানেই থাক এহন আর বাইর হওয়া লাগব না। হালকা খাইয়া ফ্রেস হইয়া একবারে কামের লাইগা বাইর হইস।
~জ্বি ভাই ।
~আইচ্ছা থাক।

রোড নম্বর নয়। ছেলেটা থাকে তিন নম্বর বাসায় ।শহরে নেমেছে অনেক আগেই ।চারদিকে সুনসান নীরবতা। রোডের ওপাশ থেকে আসছে কেউ একজন । খুব কাজ দিয়ে চলে যায় নেশা করে ফিরেছে নিশ্চই। এই সেই ছেলে চল্লিশ লাখ।নিশানা......ট্রিগার.......... দুটো শব্দ এবং একটা লাশ ।আর রায়হান হারিয়ে গেল রাতের আঁধারে।

~রায়হান সোজা চলে যায় রাজিব ভাইয়ের বাসায় ।
~ভাই কাজ হয়ে গেছে ।
~ঠিক মত করছস তো সব।
~জ্বি ভাই ।
~ঠিক আছে ঘুম দে সকালে উইঠা দেখযাবে বাকিটা।

সকালের প্রথম প্রহরেই আজ ঘুম ভেঙে যায় রায়হানের। মেজাজটাও বেশ ফুরফুরে।বাইরে থেকে চা খেয়ে এসে আবার বাসায় বসে সে।
~রায়হান কাজ সব ঠিক মতই হইছে । এইহানে পুরা টাকা আছে পয়ত্রিশ আর আগে দিছি পাঁচ। এহন সাবধানে থাকিস।
~জ্বি ভাই । ছেলামালাইকুম।

রায়হান বাসায় যায় না। সোজা চলে যায় সোহানার কাছে । গিয়েই ব্যাগের চেইনাটা খুলে দশটা টাকার বান্ডিল ছুড়ে দেয় মইন আলীর সামনে । তারপর সোহানার ঘরে গিয়ে একটানে তাকে বের করে নিয়ে চলে যায় । সবকিছু এতো আকস্মিক ঘটে যেন সোহানার কাছে সবকিছু ঘোলাটে মনেহয় ।তারপর সোজা গিয়ে ওঠে নতুন ভাড়া করা বাসায়। পুরোদিনটা কেমন আবছায়া কাটে দুজনেরই ।কথা খুব একটা হয় না শুধু চলতে থাকে উষ্ণ স্পর্শের খেলা।

একটা দিন কেটে যায় ।আসে নতুন এক দিন। কিন্তু এটা কি দিন নাকি জীবনের সবচেয়ে কুত্সিত কালো রাত ? ভাঙা দরজা .....পুলিশ..... হাতকড়া..অতঃপর ক্রসফায়ার ।সব শেষ । ভালোবাসা ঘরবাঁধার স্বপ্ন সবকিছুই। সোহানা ফিরতে চায় আগের সে জীবনে কিন্তু ঠিক ফেরা হয়ে ওঠে না।  তবে আজ অন্ধকার গলিটার রানী সেই তাকে কেউ ছোঁয় না। রাজা ছাড়া আর কারই বা রানীকে ছোঁয়ার ক্ষমতা আছে ? কিন্তু সে রাজা তো নেই । হারিয়ে গেছে তারাদের রাজ্যে। রাণী তাই একাকী ...হৃদয়ের ক্ষরিত রক্ত কখনো জল হয়ে ঝরে পড়ে চোখ বেয়ে। কাটেনা অন্ধকারের ছায়া।