গল্পহীন দুপুরের একটি দিন
নশ্বর নিটোল
গত দুদিনের ইলশেগুড়ি বৃষ্টিটা কেমন যেন চারদিকটাকে থমথমে করে দিয়েছে। আজ অবশ্য রোদ উঠেছে খানিকটা। সকালে কতটা সময় রোদ মেঘের লুকোচুরি খেলার পর অবশেষে সূর্যদেবই শেষ হাসিটা হাসল। গত দুদিন ধরেই একটা গল্প লেখবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু গল্পটা আর শেষমেশ খুঁজেই পাচ্ছি না। আজকে বাইরের রোদ ঝলমলে আকাশটা দেখে মনে হল লিখতে বসে যাই। জমে থাকা বৃষ্টির জলে চকচকে সাদা আলো ফেলে যেন এক অন্যররকম সৌন্দর্যের কথা আমাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছে কেউ। কিন্তু কোন লাভ হল না। সেই একই গল্পহীনতায় বিরক্ত হয়ে লেখা বাদ দিয়ে উঠে গেলাম ডেক্স থেকে।
সিগারেটের নেশা ধরছে খুব। এ দুদিনে ঘরে বসে বসে তিন প্যাকেট সিগারেটের আর একটাও অবশিষ্ট নেই। ভর দুপুরবেলা। লাঞ্চ এর সময়। ধুরো! ওসব ভাবে কে? সিগারেট ছাড়া তো একমুহূর্ত চলছেই না আমার। অগত্যা, বাইরে যেতেই হয়। দোকানপাট খুব একটা খোলা নেই। একটু দূরেই যেতে হল। অবশেষে একটা সিগারেট ধরিয়ে বসে পড়লাম টং এর বেঞ্চিতে। রোদ ঝলমলে হলেও সেই উষ্ণতা আর নেই। উওরের হলাকা বাতাস মাঝেমাঝে এসে একটা চেনা-অচেনা অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে।
চোখ আটকে যায়। একটি মেয়ে হেঁটে আসছে। আচ্ছা, রবিন্দ্রনাথ তো কৃষ্ণকলির কথা বলেছিলেন। সে কি দেখেছিলেন এই মেয়েটাকে। হয়তো হবে। হয়তো বা না। হ্যা, মনে হচ্ছে সে হেঁটে আসছে আমার দিকেই।
কিন্তু আমার সামনে দিয়েই যে চলে গেল, চলে গেল অন্য কোথাও। আমার ঘোর কাটছে না। কখন সিগারেটের আগুনটা নিভে গেছে টেরই পাই নি। হাটতে হাটতে বাসায় চলে এলাম। স্বাভাবিক হতে পেরেছি কতটা তা অবশ্য এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ।
কিন্তু আমার ঘোর লাগবার আরো একটা উপলক্ষ যে বাকিই রয়ে গেছে। সেই অপরূপা ঠিক দাড়িয়ে আছে আমার দরজার সামনে! আমার চারপাশটা কেমন যন নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। দাড়ালাম সামনে গিয়ে....
খুঁজছেন কাউকে?
হ্যা, আপনাকেই।
আমাকে!?
আমার মস্তিষ্কে অসাড় হবার মত আর কোন অংশই মনেহয় তখন আর অবশিষ্ট ছিল না। স্নায়ুগুলো মনেহয় ক্রমশ আলাদা হয়ে যাচ্ছিল পেশি থেকে।
দাড়িয়ে থাকবেন এখানেই। ভেতরে যাবেন না।
কোন কথা বলতে পারলাম না আমি। দরজা খুলে ভেতরে এসে বসলাম। আসল সেও। কোন কথা না বলেই ধুপ করে বসে পড়ল মেয়েটা। আর আমিও চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকলাম। সবকটা শব্দকে যেন কোথাও ফেলে এসেছি।
- কেমন আছেন?
- ভাল।
- আমি কেমন আছি তা জানতে চাইবেন না জানি। অন্তত অভিযোগগুলোতে বলুন। এতটা নিশ্চুপ কেন?
- অভিযোগ!
- হ্যা, এই অবহেলা, তাচ্ছিল্য, নিরুত্তর পড়ে থাকা চিঠি.....এ নিয় কত অভিযোগ ছিল আপনার। কিন্তু আজ কিছু বলছেন না কেন আপনি?
- চিঠি! কোন চিঠি?
- কেন ভুলে গেলেন! একটু নাহয় দেরি করেই ফেলেছি। তাই বলে আপনি ভুলে যাবেন! ভুলে গেলেন! কিন্তু তা তো হবার কথা না। নাকি না বোঝার ভান করছেন সবকিছু বুঝেও।
- আপনার কোন কথাই আমি বুঝতে পারছি না।বিশ্বাস করুন আমায়।
- আপনার কি মনে আছে সেই সময়টার কথা যখন আপনি আমাকে বারবার দেখতে চাইতেন। আর আমি। কেবলই লুকিয়ে রাখতাম নিজেকে। চাইতাম, আমার ভালবাসা, আমার প্রেম অন্ধকার হাতরে খুঁজে নিক ছায়াকে। কিন্তু আজ, আজ তো আমি ঠিক আপনারই সামনে দাড়িয়ে। তবে কেন সেচ্ছা বিরহ? কেন এত অভিমান আপনার?
- প্রেম, ভালবাসা, বিরহ এসবকিছুতো কেবলই আমার কল্পনাজুড়ে। কিন্তু কে আপনি? এসব কিছুর সাথে তো আমি নেই। আমার তো কোন বাস্ততার জগৎ নেই।
- আমি, আমি ''মাধবীলতা''। প্রেম নিয়ে আসেছি। এই যে আমি সেই ল্যাভেন্ডার নিয়ে এসেছি, আমাদের প্রেমের প্রতীক ছিল এই ল্যাভেন্ডার। আমার এই হৃদয় গ্রহন কর, ''প্রেমাংশু''।
- আমি তো "প্রেমাংশু " নই। প্রেমাংশু তো নেই এখানে
- তবে....
- আমি "রক্তব"।
- তাহলে "প্রেমাংশু " কোথায়? ওকে যে ভালবাসি খুব।
- আমিতো জানিনা। হয়তো সে হারিয়ে গেছে শহরের মানুষের ভিড়ে। হয়তোবা চিরতরে।
মেয়েটা আর একটাও কথা বলে না। ধীর, শান্ত, শ্রান্ত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যায় গলি থেকে। হতে ল্যাভেন্ডারগুচ্ছ, যত দূরে যেতে থাকে সৌরভটাও ক্ষীণ হতে থাকে ততটাই। হয়তো সেই সৌরভই খুঁজে পাবে প্রেমাংশুকে অথবা হারিয়ে যাওয়া প্রেমাংশুকেই খুঁজে পাওয়া যাবে সেই সৌরভে।
নশ্বর নিটোল
গত দুদিনের ইলশেগুড়ি বৃষ্টিটা কেমন যেন চারদিকটাকে থমথমে করে দিয়েছে। আজ অবশ্য রোদ উঠেছে খানিকটা। সকালে কতটা সময় রোদ মেঘের লুকোচুরি খেলার পর অবশেষে সূর্যদেবই শেষ হাসিটা হাসল। গত দুদিন ধরেই একটা গল্প লেখবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু গল্পটা আর শেষমেশ খুঁজেই পাচ্ছি না। আজকে বাইরের রোদ ঝলমলে আকাশটা দেখে মনে হল লিখতে বসে যাই। জমে থাকা বৃষ্টির জলে চকচকে সাদা আলো ফেলে যেন এক অন্যররকম সৌন্দর্যের কথা আমাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছে কেউ। কিন্তু কোন লাভ হল না। সেই একই গল্পহীনতায় বিরক্ত হয়ে লেখা বাদ দিয়ে উঠে গেলাম ডেক্স থেকে।
সিগারেটের নেশা ধরছে খুব। এ দুদিনে ঘরে বসে বসে তিন প্যাকেট সিগারেটের আর একটাও অবশিষ্ট নেই। ভর দুপুরবেলা। লাঞ্চ এর সময়। ধুরো! ওসব ভাবে কে? সিগারেট ছাড়া তো একমুহূর্ত চলছেই না আমার। অগত্যা, বাইরে যেতেই হয়। দোকানপাট খুব একটা খোলা নেই। একটু দূরেই যেতে হল। অবশেষে একটা সিগারেট ধরিয়ে বসে পড়লাম টং এর বেঞ্চিতে। রোদ ঝলমলে হলেও সেই উষ্ণতা আর নেই। উওরের হলাকা বাতাস মাঝেমাঝে এসে একটা চেনা-অচেনা অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে।
চোখ আটকে যায়। একটি মেয়ে হেঁটে আসছে। আচ্ছা, রবিন্দ্রনাথ তো কৃষ্ণকলির কথা বলেছিলেন। সে কি দেখেছিলেন এই মেয়েটাকে। হয়তো হবে। হয়তো বা না। হ্যা, মনে হচ্ছে সে হেঁটে আসছে আমার দিকেই।
কিন্তু আমার সামনে দিয়েই যে চলে গেল, চলে গেল অন্য কোথাও। আমার ঘোর কাটছে না। কখন সিগারেটের আগুনটা নিভে গেছে টেরই পাই নি। হাটতে হাটতে বাসায় চলে এলাম। স্বাভাবিক হতে পেরেছি কতটা তা অবশ্য এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ।
কিন্তু আমার ঘোর লাগবার আরো একটা উপলক্ষ যে বাকিই রয়ে গেছে। সেই অপরূপা ঠিক দাড়িয়ে আছে আমার দরজার সামনে! আমার চারপাশটা কেমন যন নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। দাড়ালাম সামনে গিয়ে....
খুঁজছেন কাউকে?
হ্যা, আপনাকেই।
আমাকে!?
আমার মস্তিষ্কে অসাড় হবার মত আর কোন অংশই মনেহয় তখন আর অবশিষ্ট ছিল না। স্নায়ুগুলো মনেহয় ক্রমশ আলাদা হয়ে যাচ্ছিল পেশি থেকে।
দাড়িয়ে থাকবেন এখানেই। ভেতরে যাবেন না।
কোন কথা বলতে পারলাম না আমি। দরজা খুলে ভেতরে এসে বসলাম। আসল সেও। কোন কথা না বলেই ধুপ করে বসে পড়ল মেয়েটা। আর আমিও চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকলাম। সবকটা শব্দকে যেন কোথাও ফেলে এসেছি।
- কেমন আছেন?
- ভাল।
- আমি কেমন আছি তা জানতে চাইবেন না জানি। অন্তত অভিযোগগুলোতে বলুন। এতটা নিশ্চুপ কেন?
- অভিযোগ!
- হ্যা, এই অবহেলা, তাচ্ছিল্য, নিরুত্তর পড়ে থাকা চিঠি.....এ নিয় কত অভিযোগ ছিল আপনার। কিন্তু আজ কিছু বলছেন না কেন আপনি?
- চিঠি! কোন চিঠি?
- কেন ভুলে গেলেন! একটু নাহয় দেরি করেই ফেলেছি। তাই বলে আপনি ভুলে যাবেন! ভুলে গেলেন! কিন্তু তা তো হবার কথা না। নাকি না বোঝার ভান করছেন সবকিছু বুঝেও।
- আপনার কোন কথাই আমি বুঝতে পারছি না।বিশ্বাস করুন আমায়।
- আপনার কি মনে আছে সেই সময়টার কথা যখন আপনি আমাকে বারবার দেখতে চাইতেন। আর আমি। কেবলই লুকিয়ে রাখতাম নিজেকে। চাইতাম, আমার ভালবাসা, আমার প্রেম অন্ধকার হাতরে খুঁজে নিক ছায়াকে। কিন্তু আজ, আজ তো আমি ঠিক আপনারই সামনে দাড়িয়ে। তবে কেন সেচ্ছা বিরহ? কেন এত অভিমান আপনার?
- প্রেম, ভালবাসা, বিরহ এসবকিছুতো কেবলই আমার কল্পনাজুড়ে। কিন্তু কে আপনি? এসব কিছুর সাথে তো আমি নেই। আমার তো কোন বাস্ততার জগৎ নেই।
- আমি, আমি ''মাধবীলতা''। প্রেম নিয়ে আসেছি। এই যে আমি সেই ল্যাভেন্ডার নিয়ে এসেছি, আমাদের প্রেমের প্রতীক ছিল এই ল্যাভেন্ডার। আমার এই হৃদয় গ্রহন কর, ''প্রেমাংশু''।
- আমি তো "প্রেমাংশু " নই। প্রেমাংশু তো নেই এখানে
- তবে....
- আমি "রক্তব"।
- তাহলে "প্রেমাংশু " কোথায়? ওকে যে ভালবাসি খুব।
- আমিতো জানিনা। হয়তো সে হারিয়ে গেছে শহরের মানুষের ভিড়ে। হয়তোবা চিরতরে।
মেয়েটা আর একটাও কথা বলে না। ধীর, শান্ত, শ্রান্ত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যায় গলি থেকে। হতে ল্যাভেন্ডারগুচ্ছ, যত দূরে যেতে থাকে সৌরভটাও ক্ষীণ হতে থাকে ততটাই। হয়তো সেই সৌরভই খুঁজে পাবে প্রেমাংশুকে অথবা হারিয়ে যাওয়া প্রেমাংশুকেই খুঁজে পাওয়া যাবে সেই সৌরভে।