স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্ন
নিটোল সাহা
তাসকিন বেরিয়ে পড়ে।আনমনা উদভ্রান্তের মত মনে হচ্ছে তাকে।আসলে ইদানীং সেই পুরোনো কথাগুলো বড় বেশী মনে পড়ছে।সেই রিয়ানার স্মৃতিগুলো তার অন্তরে নতুন করে কেন যেন ডালাপালা ছড়াচ্ছে।কিন্তু এতদিন পরেই বা কেন? হয়তো বাইরের সব কোলাহল আচ্ছন করে রেখেছিল তাকে ,আজকের আচেনা নিঃসঙ্গতা আবার টেনে বের করেছে সেই সব দিনগুলোকে। তাসকিনের এখন যেন সব মেয়েকেই রিয়ানা মনে হয়।সত্যিই প্রেম কি কখনো ভোলা যায়? হয়তো না।তাসকিন বাসে ওঠে ...গন্তব্য ... সে তা জানে না ।হয়তো কোন সবুজ উদ্যানের ছায়া দেখে সেখানেই কাটিয়ে দেবে সময়। নয়তো শহুরে ব্যস্ত মানুষদের ভিড়ে মিশে উবলব্ধি করতে চাইবে জীবনটাকে।আজ পুরোনো পাখি গুলো আবার অন্তরের চিলেকোঠায় কিচিরমিচির করছে।
হঠাত্ তার ঠিক পাশের সিটে এসে বসে একটি মেয়ে ,হ্যা ঠিক যেন রিয়ানা ।পরক্ষনেই ভেবে ওঠে ...হতাশ হয় ...কেননা আজকাল তো তার সব মেয়েকেই রিয়ানা বলে মনেহয়।কিন্তু তবুও মনেহতে থাকে বারবার -এতো অন্য মেয়েদের মত নয়।তাসকিন দমিয়ে রাখে নিজেকে ... এই বলে - পাঁচ বছর আগে দেখা সেই কিশোরী মেয়েকে কি আজ চেনা সম্ভব? "এক্সকিউজ মি ভাইয়া, কিছু মনে করবেন না, আপনাকে চেনাচেনা লাগছে।" আকাশ থেকে ধরনীর সব বিস্ময় যেন তীরের মত বিধল তাসকিনের কাছে। কোন কথা তার মুখ থেকে বেরোল না।
"আপনি কি তাসকিন?" অবাক দৃষ্টিতে সে চেয়ে দেখে, - এ মেয়ে তো রিয়ানা না হয়েই পারে না।ঠিক ঠোটের উপরে কাল তিল,পটলচোরা দুই চোখ,তার ভাষা যেন চিত্কার করে বলছে ,"আমিই রিয়ানা ,তোমার ভালবাসার রিয়ানা।"সে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞাসা করে ... "তুমি সাদিয়া?" ..."তাসকিন?" তারা একে অপরের চোখের ভাষা পড়তে চায়।যেন অনেক কিছুই আজকের দিনটির জন্যে জমে আছে।প্রায় খালি রাস্তটিতে,প্রায় খালি বাসেই যেন তাদের এই দেখা হবার কথা ছিল। "তাসকিন ,তুমি কি আজও আমাকে ভালবাস?" "ভালবাসা কি কখনো হরায়? যদি অন্তরের ভেতরটা একবার দেখাতে পারতাম ,তবে দেখতে পেতে এতগুলো বছর ধরে কত শত ভালবাসার ফুল তোমায় দেবার জন্য জমে আছে।" একটা নতুন সূর্য যেন আজ তার আলোগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাস থেকে ,হতে হাত রেখে দুজন হারিয়ে যায় উদ্যানের সবুজে।
মলিন শুকনো পাতাগুলোকে মনেহয় যেন এক একটি স্বর্ণের খন্ড ।সে খন্ডগুলো কেবলই দ্যুতি ছড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ।তারা দুজন মিলিয়ে গেছে এক নিবিড় প্রেম স্বর্গে।কিন্তু সেই স্বর্গ থেকে তাদের আবার নেমে আসতে হয় মর্তে । স্বর্গের চির রৌদ্রময়তাকে নিয়ে আসতে পারে না ,তাদের প্রেমের ইন্দ্রজাল। দুপুরের সূর্য বিকেল পেরিয়ে পশ্চিমের আকশে ঢলে পড়ে।আর সব পাখিদের মতই পায়ে পায়ে নীড়ে ফেরে তারা। নিজ নীড়ে বারান্দার সামনে দাড়িয়ে এক চিন্তার জগতে চলে যায় তাসকিন ।
তার মনের গহীনে তৈরি করতে থাকে এক প্রেমবীণার সুর। সেই অপরূপা কে সে কেবলই নানারূপে ,নানারঙে তার কল্পনায় সাজাতে থাকে। কিন্তু হায়, কোথা সে আবার খুঁজে পাবে তার প্রেম।তবে কি আবার সে তাকে হারিয়ে ফেলেছে? আচমকা তার দুই পা খসে পড়ে সেই স্বপ্নের ফেরি থেকে।তবু তো বিশ্বাস হতে চায় না ।"এ কখনই ভ্রম হতে পারে না।"শুধুই বারবার মনে হতে থাকে রিয়ানার কথা। রিয়ানাতো কথা দিয়েছিল ,তার হাত ধরে কথা দিয়েছিল ,বলেছিল.... "বল, সারা জীবন পাশে থাকবে,আমার পাশে ,আবার হারিয়ে যাবে না।" রিয়ানার কথা গুলো ফুটন্ত জলের বুদবুদের মত তার মনের মধ্যে বিষবাষ্প তৈরি করছে। আর ভাবতে পারে না তাসকিন। দঃসহ যন্ত্রনা কেড়ে নেয় তার চোখের বন্ধ হবার ক্ষমতা। তাসকিনের এই রাতটিকেই জীবনের সবচাইতে অসহনীয় আর উন্মাদনাময় রাত বলে মনে হতে থাকে। রাত শেষ হয়, ভোরের আলোর সোনালি আভা চারিদিকে ছড়িয়ে। সেই পাখিরা আবার বেরিয়ে পড়ে ,খুঁজে নেয় তাদের সঙ্গীকে।আর নিজেকে বোঝাতে পারে না তাসকিন। কুয়াশামাখা ভোরে সেই সব পাখিদের মত তাসকিনও সঙ্গীর খোঁজে বেরিয়ে পরে।দাড়িয়ে থাকে সেই বাসস্টান্ডটিতে যেখান থেকে সেদিন বাসে উঠেছিল রিয়ানা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় পাখিরা নীড়ে ফেরে।তাসকিনও ফেরে ।আবার ভোরে সেই পাখিদের মতই রিয়ানাকে খুঁজে ফেরে।ফিরে আসে পাখিদের সাথে।স্বপ্ন দেখে একদিন পাখিদের মতই খুঁজে পাবে তার সঙ্গী রিয়ানাকে।
নিটোল সাহা
তাসকিন বেরিয়ে পড়ে।আনমনা উদভ্রান্তের মত মনে হচ্ছে তাকে।আসলে ইদানীং সেই পুরোনো কথাগুলো বড় বেশী মনে পড়ছে।সেই রিয়ানার স্মৃতিগুলো তার অন্তরে নতুন করে কেন যেন ডালাপালা ছড়াচ্ছে।কিন্তু এতদিন পরেই বা কেন? হয়তো বাইরের সব কোলাহল আচ্ছন করে রেখেছিল তাকে ,আজকের আচেনা নিঃসঙ্গতা আবার টেনে বের করেছে সেই সব দিনগুলোকে। তাসকিনের এখন যেন সব মেয়েকেই রিয়ানা মনে হয়।সত্যিই প্রেম কি কখনো ভোলা যায়? হয়তো না।তাসকিন বাসে ওঠে ...গন্তব্য ... সে তা জানে না ।হয়তো কোন সবুজ উদ্যানের ছায়া দেখে সেখানেই কাটিয়ে দেবে সময়। নয়তো শহুরে ব্যস্ত মানুষদের ভিড়ে মিশে উবলব্ধি করতে চাইবে জীবনটাকে।আজ পুরোনো পাখি গুলো আবার অন্তরের চিলেকোঠায় কিচিরমিচির করছে।
হঠাত্ তার ঠিক পাশের সিটে এসে বসে একটি মেয়ে ,হ্যা ঠিক যেন রিয়ানা ।পরক্ষনেই ভেবে ওঠে ...হতাশ হয় ...কেননা আজকাল তো তার সব মেয়েকেই রিয়ানা বলে মনেহয়।কিন্তু তবুও মনেহতে থাকে বারবার -এতো অন্য মেয়েদের মত নয়।তাসকিন দমিয়ে রাখে নিজেকে ... এই বলে - পাঁচ বছর আগে দেখা সেই কিশোরী মেয়েকে কি আজ চেনা সম্ভব? "এক্সকিউজ মি ভাইয়া, কিছু মনে করবেন না, আপনাকে চেনাচেনা লাগছে।" আকাশ থেকে ধরনীর সব বিস্ময় যেন তীরের মত বিধল তাসকিনের কাছে। কোন কথা তার মুখ থেকে বেরোল না।
"আপনি কি তাসকিন?" অবাক দৃষ্টিতে সে চেয়ে দেখে, - এ মেয়ে তো রিয়ানা না হয়েই পারে না।ঠিক ঠোটের উপরে কাল তিল,পটলচোরা দুই চোখ,তার ভাষা যেন চিত্কার করে বলছে ,"আমিই রিয়ানা ,তোমার ভালবাসার রিয়ানা।"সে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞাসা করে ... "তুমি সাদিয়া?" ..."তাসকিন?" তারা একে অপরের চোখের ভাষা পড়তে চায়।যেন অনেক কিছুই আজকের দিনটির জন্যে জমে আছে।প্রায় খালি রাস্তটিতে,প্রায় খালি বাসেই যেন তাদের এই দেখা হবার কথা ছিল। "তাসকিন ,তুমি কি আজও আমাকে ভালবাস?" "ভালবাসা কি কখনো হরায়? যদি অন্তরের ভেতরটা একবার দেখাতে পারতাম ,তবে দেখতে পেতে এতগুলো বছর ধরে কত শত ভালবাসার ফুল তোমায় দেবার জন্য জমে আছে।" একটা নতুন সূর্য যেন আজ তার আলোগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাস থেকে ,হতে হাত রেখে দুজন হারিয়ে যায় উদ্যানের সবুজে।
মলিন শুকনো পাতাগুলোকে মনেহয় যেন এক একটি স্বর্ণের খন্ড ।সে খন্ডগুলো কেবলই দ্যুতি ছড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ।তারা দুজন মিলিয়ে গেছে এক নিবিড় প্রেম স্বর্গে।কিন্তু সেই স্বর্গ থেকে তাদের আবার নেমে আসতে হয় মর্তে । স্বর্গের চির রৌদ্রময়তাকে নিয়ে আসতে পারে না ,তাদের প্রেমের ইন্দ্রজাল। দুপুরের সূর্য বিকেল পেরিয়ে পশ্চিমের আকশে ঢলে পড়ে।আর সব পাখিদের মতই পায়ে পায়ে নীড়ে ফেরে তারা। নিজ নীড়ে বারান্দার সামনে দাড়িয়ে এক চিন্তার জগতে চলে যায় তাসকিন ।
তার মনের গহীনে তৈরি করতে থাকে এক প্রেমবীণার সুর। সেই অপরূপা কে সে কেবলই নানারূপে ,নানারঙে তার কল্পনায় সাজাতে থাকে। কিন্তু হায়, কোথা সে আবার খুঁজে পাবে তার প্রেম।তবে কি আবার সে তাকে হারিয়ে ফেলেছে? আচমকা তার দুই পা খসে পড়ে সেই স্বপ্নের ফেরি থেকে।তবু তো বিশ্বাস হতে চায় না ।"এ কখনই ভ্রম হতে পারে না।"শুধুই বারবার মনে হতে থাকে রিয়ানার কথা। রিয়ানাতো কথা দিয়েছিল ,তার হাত ধরে কথা দিয়েছিল ,বলেছিল.... "বল, সারা জীবন পাশে থাকবে,আমার পাশে ,আবার হারিয়ে যাবে না।" রিয়ানার কথা গুলো ফুটন্ত জলের বুদবুদের মত তার মনের মধ্যে বিষবাষ্প তৈরি করছে। আর ভাবতে পারে না তাসকিন। দঃসহ যন্ত্রনা কেড়ে নেয় তার চোখের বন্ধ হবার ক্ষমতা। তাসকিনের এই রাতটিকেই জীবনের সবচাইতে অসহনীয় আর উন্মাদনাময় রাত বলে মনে হতে থাকে। রাত শেষ হয়, ভোরের আলোর সোনালি আভা চারিদিকে ছড়িয়ে। সেই পাখিরা আবার বেরিয়ে পড়ে ,খুঁজে নেয় তাদের সঙ্গীকে।আর নিজেকে বোঝাতে পারে না তাসকিন। কুয়াশামাখা ভোরে সেই সব পাখিদের মত তাসকিনও সঙ্গীর খোঁজে বেরিয়ে পরে।দাড়িয়ে থাকে সেই বাসস্টান্ডটিতে যেখান থেকে সেদিন বাসে উঠেছিল রিয়ানা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় পাখিরা নীড়ে ফেরে।তাসকিনও ফেরে ।আবার ভোরে সেই পাখিদের মতই রিয়ানাকে খুঁজে ফেরে।ফিরে আসে পাখিদের সাথে।স্বপ্ন দেখে একদিন পাখিদের মতই খুঁজে পাবে তার সঙ্গী রিয়ানাকে।