বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬

ইলিনয় আর আমার এথেনা অধ্যায়ের সমাপ্তি

ইলিনয় আর আমার এথেনা অধ্যায়ের সমাপ্তি
✍নশ্বর নিটোল
এথেনা ,তোমার জন্যে ওডিয়ুসের আগুনে আজ বিদ্ধস্ত এ নগরী,
এথেনা ,তোমার উপহার এনে ডেকে এনেছি নিজেদের পরাভব,
এথেনা, তোমার জন্যে ইলিনয় আজ নিস্তব্ধ বধ্যভূমি,
সম্মোহিত ঘোড়ার গর্ভ হতে সৈন্যরা এসে ভেঙে দিল দূর্গের দ্বারগুলো সব।

এথেনা ,আমার এ সহস্র বছরের ভালোবাসা একরাতে করে দিলে ছারখার,
তোমার কি নিভিয়ে দেবার ক্ষমতা ছিলো না সাইসনের মশালের আগুন?
তুমি কিভাবে পারলে এ রাতে নিদ্রারত হতে?
তোমায় কি একটুকুও স্পর্শ করে গেল না এ ভয়ংকর টাইফুন?
এথেনা, তুমি দেখেছ, সারাটা ট্রয় আজ জ্বলছে,
তুমি দেখছ ,কিমাসুইসের ছোট্ট হাতটা হাত বাড়িয়ে ওর মাকে খুঁজছে,
তুমি দেখেছ, বিয়ের আসরে ছাই হয়ে গেছে রেটমন-অলডিরা।
এথেনা ,আমি তোমায় আর ভালবাসি না,
ভুলে গেছি সহস্র বছর।
শুধু ভুলব না বিশ্বাসঘাতকতা তোমার ।
জানি আজ আমি পরাস্ত সৈনিক_ ঈনিয়াস,
তবু দেবী ,তবু সে ভালবেসে বাড়িয়ে দিয়েছে তার হাত,
আফ্রোদিতি, দেবী ,তোমাতেই আমি খুঁজে নেব দগ্ধ নগরীর নতুন প্রভাত।

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

একজন বেশ্যা আর তার প্রেমের গল্প

একজন বেশ্যা আর তার প্রেমের গল্প



নশ্বর নিটোল

এলাকাটা বনানীতে পড়লেও সেটা শুধু নামেই । খুব ঘিঞ্জি এলাকাটা , ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে থাকা দুই পাশের রাস্তাটাও বেশ সরু। এই জায়গায় ভদ্রলোকেরা পা না মাড়ালেও । কালোকাচওয়ালা গাড়িগুলো এদিকটাতে বেশ দেখা যায় ।চ্যালারা এসে তুলে নিয়ে যায় ।

এই বেশ্যাপল্লীর অন্ধকার জগতের বাসিন্দা সোহানা। তার পৃথিবী বলতে এই অন্ধকার গলি ,কালোকাঁচের গাড়ি , আর কিছু চেনা অচেনা ফ্লাটবাসা আর হোটেলের রুম।জন্ম থেকে এসবই সে দেখে এসছে। পেটপুড়ে খেতে পেয়েছে , অবশ্য টুকটাক দুচারটে অন্যকিছুও যে খেতে হয়নি তাও না। বাইরের পৃথিবীটাকে দেখেনি বলেই হয়তো মনে তেমন কোন চাওয়া জন্মে নি। সারাদিন কত খদ্দের আসে ।আবার চলে যায় ।কেউ কেউ নিয়মিত । তবে একজন আসে.... সবার থেকে আলাদা সে । অন্যদের মত সবকিছু কাগুজে নোটে মোড়ানো নয়। বন্দী জীবনের আকাশে যেন একটুকরো মেঘের মতই মনেহয় । ভালোবাসা , প্রেম এসব মানবীয় কামনাকে তো পিশাচ দালালগুলি দেয়াল দিয়ে আটকে রাখতে পারে না!

~কি খবর তোর ?এদ্দিন কৈ ছিলি? জানস না তোর জন্যে প্রতিদিন বইসা থাকি ।
~ খাইছে !!! মাগীর কথায় তো আমি পুরাই......... সে আমার অপেক্ষায় থাকে
~দেখ, তুই আমারে মাগী কইবি না
~আহারে !! শখ কত! মাগীরে মাগী বলব নাতো কি বলব শুনি?
~দেখ , অন্যেরা সবাই কইলেও কিছুই না কিন্তু তোর মুখ থেইকা আমি এই কথা শুনতে পারি না। মনেলাগে বহুত....
~কৈ লাগে বললি???
~মনেলাগে। বুকের ভিতরে ছিড়া যায়
রায়হান বুকে হাত দিয়ে বসে।তারপর ...................................................................
~ঐ তোর কাজকাম কেমন চলে রে?
~হাহাহাহাহা
~হাসতাছস কেন?
~তোর প্রশ্নের কারণেই হাসি ? আমার নাকি আবার কোন কাজকর্ম আছে ......হাহাহাহাহাহা
~দেখ ,আজাইরা পেচাল পাড়বি না । কাজকাম করস না এত বেডাগুলির কাছে যে এতগুলি পয়সা ঝাড়স ঐগুলি কি হাওয়ায় ভাইসা আহে নাকি ?
~হাওয়ায় ভাইসা আসে নাকি পানিতে ভাইসা আসে তা জানলে তোর লাভ কি? চুপ থাক।
~কিরে যাবি গা?
~হু , রাতে আসবনে আবার ।রেডি থাকিস।

রায়হান স্যাতস্যাতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। গন্তব্য , ছুলার মাঠ। রাজিব ভাই ডাকছে কি না কি কাজ করা লাগবে । নিশ্চয় কারো হাত ভাঙো,পা ভাঙো,হুমকি দেও আরও কত কি। অথচ এই রায়হায় ছেলেটা ছিলো কি? বড় পদে বসা বাবার কালো টাকার সাপ্লাইয়ে বেশ ভালোই ছিল । লেখাপড়ায়ও খুব একটা খারাপ ছিলো না অন্যান্য গড়পড়তা ছাত্রদের চাইতে বেশ মেধাবিই ছিলো । বয়সের দোষে ভালবাসতে শিখেছিল।হায়রে ভালোবাসা !!!!!!............শেষমেষ প্রত্যাহত হয়ে ।সিগারেট,গাঁজা ,মদ, ইয়বাটাও ধরল শেষ পর্যন্ত । বাসায় জায়গা হয়নি ঠিক তা না। রাগারাগি করে ঘর ছেড়ে আসার দিনই বাবা চলে গেল । হয়তোবা একমাত্র ছেলের এমন অবস্হা সহ্য করতে পারেন না। এত কিছু নিয়ে মাও শেষে গ্রামেই চলে গেলেন । রায়হান দুইবার গিয়েছিল গ্রামে মাকে দেখার জন্যে ।দেখা হয়নি মা আসনি ওর সামনে । তারপর রায়হান ভাবে ভালই হয়ে এ মুখে মায়ের সামনে দাড়াবেইবা কিভাবে । তবুও হৃদয়টা যেন খা খা করে ওঠে ।
ছুলার মাঠে এসে পৌঁছে সে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতেই।

~ছেলামালাইকুম ভাই ।
~শোন একখান সিল ফালাইতে হইবো ।
~কি কন ভাই । ছোটখাটো লুক আমি ।নতুন আইছি। সিল কেমনে ফালামু।
~এই শালা বেশী পকরপকর করস ক্যা ,অ্যা? শোন টেকা, বিশাল টেকার কাজ।সত্তর লাখ ।চিন্তা করবার পারস? তর চল্লিশ আর আমার তিরিশ ।
টাকার অঙ্কটা শুনে চোখটা এক ঝলক মেরে আসে রায়হানের। ভয়গুলো নিমেষেই কেটে যায় । মইন দালানকে লাখ দশেক টাকা ধরায় দিয়ে সোহানাকে নিয়ে বাকি টাকার বেশ ভালো একটা ব্যবস্থা করে নিতে পারবে এমনটাই চিন্তা করে মনেমনে।
~কিরে কি ভাবস এত ।টেনশন নিস না।বিকালে আমার বাসায় আইসা জিনিস আর এডভান্স কিছু নিয়া যাইস।
~ঠিকাছে ভাই ।

রায়হান যেন আজকে এক অন্তিম আনন্দ পেয়ে গেছে । ছুটে যায় আবার সেখানে , সোহানার কাছে ।

~ঐ সনু আছস?
~কিরে তোর কি হইছে রে?
~আরে আর আমাদের বেশি দিন এমনে থাকা লাগব না।
~ক্যা কি হইল আবার ?তর কি মাথা খারাপ হইয়া গেলো নাকি ?
~আরে না ।দেখিস দুই দিনপর তরে আমি এইখান থেইকা নিয়া যামু।
সোহানা বুঝতে পারে না। হঠাৎই মনে একটা ভয় কাজ করে। কিন্তু আসলে ভয়টা যে কিসের সেটা সে নিজেই আন্দজ করতে পারে না।
~সনু এখন আমি যাই রে ।এরপরেরবার যাওয়ার সময়ে তোরে নিয়াই যামু।

রাজিব ভাইয়ের বাসায় গিয়ে কলিংবেল দিতেই দরজা খুলে দেয় রাজিব ভাই ।
~আয় রায়হান ভিতরে আয়।
এই ল জিনিস ।টার্গেট জানি একদম মিস না হয়। আর এইখানে পাঁচ আছে বাকিটা কামের পরে। ঠিক জায়গামতন ফালাবি। কি কথা বুঝছস?
~জ্বি ভাই ।
~এহানেই থাক এহন আর বাইর হওয়া লাগব না। হালকা খাইয়া ফ্রেস হইয়া একবারে কামের লাইগা বাইর হইস।
~জ্বি ভাই ।
~আইচ্ছা থাক।

রোড নম্বর নয়। ছেলেটা থাকে তিন নম্বর বাসায় ।শহরে নেমেছে অনেক আগেই ।চারদিকে সুনসান নীরবতা। রোডের ওপাশ থেকে আসছে কেউ একজন । খুব কাজ দিয়ে চলে যায় নেশা করে ফিরেছে নিশ্চই। এই সেই ছেলে চল্লিশ লাখ।নিশানা......ট্রিগার.......... দুটো শব্দ এবং একটা লাশ ।আর রায়হান হারিয়ে গেল রাতের আঁধারে।

~রায়হান সোজা চলে যায় রাজিব ভাইয়ের বাসায় ।
~ভাই কাজ হয়ে গেছে ।
~ঠিক মত করছস তো সব।
~জ্বি ভাই ।
~ঠিক আছে ঘুম দে সকালে উইঠা দেখযাবে বাকিটা।

সকালের প্রথম প্রহরেই আজ ঘুম ভেঙে যায় রায়হানের। মেজাজটাও বেশ ফুরফুরে।বাইরে থেকে চা খেয়ে এসে আবার বাসায় বসে সে।
~রায়হান কাজ সব ঠিক মতই হইছে । এইহানে পুরা টাকা আছে পয়ত্রিশ আর আগে দিছি পাঁচ। এহন সাবধানে থাকিস।
~জ্বি ভাই । ছেলামালাইকুম।

রায়হান বাসায় যায় না। সোজা চলে যায় সোহানার কাছে । গিয়েই ব্যাগের চেইনাটা খুলে দশটা টাকার বান্ডিল ছুড়ে দেয় মইন আলীর সামনে । তারপর সোহানার ঘরে গিয়ে একটানে তাকে বের করে নিয়ে চলে যায় । সবকিছু এতো আকস্মিক ঘটে যেন সোহানার কাছে সবকিছু ঘোলাটে মনেহয় ।তারপর সোজা গিয়ে ওঠে নতুন ভাড়া করা বাসায়। পুরোদিনটা কেমন আবছায়া কাটে দুজনেরই ।কথা খুব একটা হয় না শুধু চলতে থাকে উষ্ণ স্পর্শের খেলা।

একটা দিন কেটে যায় ।আসে নতুন এক দিন। কিন্তু এটা কি দিন নাকি জীবনের সবচেয়ে কুত্সিত কালো রাত ? ভাঙা দরজা .....পুলিশ..... হাতকড়া..অতঃপর ক্রসফায়ার ।সব শেষ । ভালোবাসা ঘরবাঁধার স্বপ্ন সবকিছুই। সোহানা ফিরতে চায় আগের সে জীবনে কিন্তু ঠিক ফেরা হয়ে ওঠে না।  তবে আজ অন্ধকার গলিটার রানী সেই তাকে কেউ ছোঁয় না। রাজা ছাড়া আর কারই বা রানীকে ছোঁয়ার ক্ষমতা আছে ? কিন্তু সে রাজা তো নেই । হারিয়ে গেছে তারাদের রাজ্যে। রাণী তাই একাকী ...হৃদয়ের ক্ষরিত রক্ত কখনো জল হয়ে ঝরে পড়ে চোখ বেয়ে। কাটেনা অন্ধকারের ছায়া।


বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৬

আছো কিংবা নেই

আছো কিংবা নেই
নশ্বর নিটোল
কোন এক দিবাস্বপ্নে তুমি এসেছিলে,
যখন কাকেরা ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল,
আমার হাতের চুরুটের শেষ ছাইটুকু ঝরে গিয়েছিল আরও আগেই,
তুমি এসেছিলে , হঠাৎ সবকিছু যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আকাশের সূর্যটা সাদা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্যে,
সেই বটগাছটার পাতাগুলো সব নুইয়ে পড়েছিল।
সবগুলো মানুষের চোখের পলক যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সুদীর্ঘ সময়ের জন্যে,
সমুদ্রের টেউগুলোর অবিরাম গর্জন সে মূহুর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল।
ঘাসের ওপরের শেষ শিশির বিন্দুটাকে মাড়িয়েই তুমি এসেছিলে,
বিস্মৃত নয়নে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখেছিলে সেখানে দাঁড়িয়েই,
তুমি কি সেদিন অপেক্ষা করছিলে কারো জন্যে?
নাকি তুমি খুঁজেছিলে কাউকে?
বিশ্বাস কর ,সেদিন আমি তোমার সামনে ছিলাম না!
দাঁড়িয়ে ছিলাম একলা দূরে বহুদূরে,
এত দূরে তো দৃষ্টি যায় না,
কিন্তু তোমাকে আমি দেখেছিলাম দিব্যদৃষ্টিতে,
শুধু দূর থেকে দেখেই যাচ্ছিলাম।
বিশ্বাস কর ,সেদিন আর কেউ দেখেনি তোমাকে!
শুধু আমিই দেখেছিলাম ,দেখেছিলাম দিব্যদৃষ্টিতে!
দেখবেই বা কি করে বল, তারা তো কবি নয়,
তোমারা তো শুধুই কবিদের কাছে আসো।
তাইতো তোমরা ওদের কাছে থাকো না,
তোমরা তো কবিদের খুঁজে নাও তাঁদের কলমের ছোয়ায়,
তোমরা তো কেবলই কবিতায়ই লুকিয়ে থাকো,
কখনো তো তোমরা বাস্তবে কবির স্পর্শ পাও না।
তুমি ছিলে ঐ অন্যসব কবিদের কল্পিত রূপসী মনবীর মত?
কিন্তু না, তুমি সেই সব অপ্সরী নারীদের মত ছিলে না,
তুমি রক্তশ্বেত বর্ণের অধিকারিণী ছিলে না ,ছিলে ঈষৎ তামাটে,
তোমার চোখদুটো পটলচেরা ছিলো না, কিন্তু তাতে লুকিয়ে ছিলো ভাষা,
তোমার ঠোঁট দুটো অত গোলাপী ছিলো না,নিকোটিনে কালো হয়ে গিয়েছিল তার সুগন্ধ ছড়িয়ে;
তবু তুমি ছিলে আমার কবিতায়
আছো আজও।
যখন গভীর রাতে একা জানালায় বসি, চাঁদটাতে তাকলেই তোমাকে দেখতে পাই,
যখন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি, জমে থাকা বৃষ্টির ফোঁটায় তোমাকে দেখতে পাই,
যখন ভুল করে ওদিকটায় যাই , দেখি এখনও হেঁটে যাচ্ছ সেপথেই।
আচ্ছা ,যদি ডাকদেই তোমাকে ?ফিরে কি তাকাবে তুমি ?
যদি চাই একটু আলতো ঠোঁটের স্পর্শ ,দেবে কি?
আমি জানি তুমি নেই , কেবলই কল্পনাতেই আসো,
আমি জানি তুমি নেই ,শুধু স্বপ্নেই হাত বাড়িয়ে ডাকো,
তবু মনহয় তুমি এখানেই আছ, যখন যেখানেই থাকি না কেনো,
"এইতো আমি তোমার পাশে, " আড়াল থেকেই বলে ওঠো।
কিন্তু আমি জানি তুমি নেই,
তুমি আমার সাথে থাকো না, তুমি থাকো আমার কবিতায়,
তুমি নেই ,তবু না থেকেও আছো এখানেই ।


বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬

সেপ্টেম্বরের শেষ পায়ের ছাপ

সেপ্টেম্বরের শেষ পায়ের ছাপ
নশ্বর নিটোল
মনেআছে, স্কুলটার পেছনে ছোট্ট একটা গলি ছিল । সেখানে তুমি থাকতে । কখনো চারদিকে ঘেরা ঐ স্কুলভ্যানটার ভেতরে কখনো বা বাইরে । আর আমি তোমাকে দেখবার জন্যে স্কুলের সেই ছোট্ট গলিটাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম । আমার স্কুল শুরু হবার অনেক আগে থেকেই । তুমি মাঝেমাঝে আমাকে দেখে মুখ লুকাতে, কারুকার্যময় শোভাটাকে আড়াল করতে চাইতে সাদা ওড়নাটা দিয়ে ঢেকে রেখে । পারতে না তখন শুভ্র কাপড়ও তোমার উজ্জ্বল্যের কাছে হার মানতো। আর তোমার সবচেয়ে সুন্দর চোখজোড়া আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন খুঁজে বেড়াতো। আমি বুঝতে চাইতাম কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতে পারতাম না কি লেখা আছে ওতে। মনেআছে ,তুমি যখন আইসক্রিম খেতে  তখন আমি আরেকটা আইসক্রিম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম । খাওয়া ঠিক হয়ে উঠতো না তোমার দিকে তাকিয়েই যেন সব ভুলে যেতাম । আমি যখন তোমাকে নাম ধরে ডাকতাম তখন বেশ বিরক্ত হতে। কিছুটা রেগে গিয়ে বলতে -বেয়াদব..। তোমার এই ডাকটা না খুব ভাল লাগত, তাই বারবারই শোনা হত। ও হ্যা মনেপড়েছে, আর একটা কথা তুমি বলতে ,- একটা থাপ্পর দিব ধরে। অবশ্য সেই থাপ্পর খাবার সৌভাগ্য আমার হয়নি কোনোদিনও। তারপর একদিন হঠাৎ করে কোথায় যে হারিয়ে গেলে আর কোনদিন তোমায় খুঁজে পাইনি। অনেক গুলো সেপ্টেম্বর কেটে গেছে এরপর থেকে । আমি অনেক দিন গিয়েছিলাম সেই গলিটাতে কিন্তু সেই জায়গাটা এখন খুব বিরান, সেখানে কেউ আমাকে একটিবারের জন্য বলে না -বেয়াদব। কেউ রাগ করে বলে না- একটা থাপ্পর দিব ধরে। সবকিছু কেন যেন খা খা করছে। শূন্যতায় যেন মিশে গেছে পৃথিবী ।তবুও এখনো মাঝরাতে স্বপ্নঘুম ভেঙে চিৎকার করে উঠি -মাধবী,মাধবী বলে। মনেহয় কেউ যেন অচেনা এক পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়িয়ে ডাকছে তোমায় , হয়তো সে আমিও হতে পারি ।

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

নির্বাসন ,অতঃপর আমার ঈশ্বর হয়ে ওঠা

নির্বাসন ,অতঃপর আমার ঈশ্বর হয়ে ওঠা
নশ্বর নিটোল
আমার সর্বশেষ নির্বাসন কোন গভীর রাতে হয়নি ,
হয়েছিল এক সদ্য সূর্য ওঠা ভোরে,
সেদিন আমি কাঁদতে পারিনি , আমার চারপাশ ঢেকে ছিল আলোতে।
তোমারা সেদিন আমাকে দেখেছিলে খুব হাসি খুশি,
ভেবেছিলে, আমি উচ্ছলতায় পরিপূর্ণ তারুণ্যে,
তোমারা আমার হৃদয়ের হাহাকার শোননি, যা ভরে গিয়েছিল বিষবাষ্পে।

সেদিন ,তোমাদের মাঝে থেকেই আমি গড়ে নিয়েছিলাম আমার নির্বাসিত প্রান্তর,
তোমাদের বিশাদকে জানিয়ে দিয়েছিলাম শেষ বিদায়,
সম্পূর্ণ করেছিলাম তোমাদের নিয়ে আমার লেখা উপন্যাসটার শেষ অধ্যায়,
সেদিন ,তোমাদের মত নশ্বর মানুষদের মাঝে থেকেই আমি হয়ে উঠেছিলাম অবিনশ্বর ঈশ্বর ।

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

#সঙ্গী

 চুপচাপ এই শহুরে রাত্রে, আমি প্রান্তবিহীন মরুভূমির পথিক,
 বর্ণহীন এক দুঃসহ জীবনের প্রাতে,
বেদনা,কষ্ট,জারায় আমি ছুটে বেড়াচ্ছি কবলই দ্বিগবিদ্বিক।
 সেই প্রাচীন এক সুবাসে আমি নিমজ্জিত করি নিজেকে, 
আমার হাতের বোতলে থাকা হুইস্কিতে,
 অবিরাম হেঁটে আমি খুব বেশি তৃষ্ণার্ত আজকে,
 নিজেকে ভাসিয়ে দেই আমি এক অচেনা জগতে।
 একের পর এক পেগে,
আমি ভুলতে চাই সবকিছুকে,
 তুমিও আর মনেকরো না আমাকে।

বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্ন

 স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্ন
নিটোল সাহা
তাসকিন বেরিয়ে পড়ে।আনমনা উদভ্রান্তের মত মনে হচ্ছে তাকে।আসলে ইদানীং সেই পুরোনো কথাগুলো বড় বেশী মনে পড়ছে।সেই রিয়ানার স্মৃতিগুলো তার অন্তরে নতুন করে কেন যেন ডালাপালা ছড়াচ্ছে।কিন্তু এতদিন পরেই বা কেন? হয়তো বাইরের সব কোলাহল আচ্ছন করে রেখেছিল তাকে ,আজকের আচেনা নিঃসঙ্গতা আবার টেনে বের করেছে সেই সব দিনগুলোকে। তাসকিনের এখন যেন সব মেয়েকেই রিয়ানা মনে হয়।সত্যিই প্রেম কি কখনো ভোলা যায়? হয়তো না।তাসকিন বাসে ওঠে ...গন্তব্য ... সে তা জানে না ।হয়তো কোন সবুজ উদ্যানের ছায়া দেখে সেখানেই কাটিয়ে দেবে সময়। নয়তো শহুরে ব্যস্ত মানুষদের ভিড়ে মিশে উবলব্ধি করতে চাইবে জীবনটাকে।আজ পুরোনো পাখি গুলো আবার অন্তরের চিলেকোঠায় কিচিরমিচির করছে।
 হঠাত্‍ তার ঠিক পাশের সিটে এসে বসে একটি মেয়ে ,হ্যা ঠিক যেন রিয়ানা ।পরক্ষনেই ভেবে ওঠে ...হতাশ হয় ...কেননা আজকাল তো তার সব মেয়েকেই রিয়ানা বলে মনেহয়।কিন্তু তবুও মনেহতে থাকে বারবার -এতো অন্য মেয়েদের মত নয়।তাসকিন দমিয়ে রাখে নিজেকে ... এই বলে - পাঁচ বছর আগে দেখা সেই কিশোরী মেয়েকে কি আজ চেনা সম্ভব? "এক্সকিউজ মি ভাইয়া, কিছু মনে করবেন না, আপনাকে চেনাচেনা লাগছে।" আকাশ থেকে ধরনীর সব বিস্ময় যেন তীরের মত বিধল তাসকিনের কাছে। কোন কথা তার মুখ থেকে বেরোল না।
"আপনি কি তাসকিন?" অবাক দৃষ্টিতে সে চেয়ে দেখে, - এ মেয়ে তো রিয়ানা না হয়েই পারে না।ঠিক ঠোটের উপরে কাল তিল,পটলচোরা দুই চোখ,তার ভাষা যেন চিত্‍কার করে বলছে ,"আমিই রিয়ানা ,তোমার ভালবাসার রিয়ানা।"সে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞাসা করে ... "তুমি সাদিয়া?" ..."তাসকিন?" তারা একে অপরের চোখের ভাষা পড়তে চায়।যেন অনেক কিছুই আজকের দিনটির জন্যে জমে আছে।প্রায় খালি রাস্তটিতে,প্রায় খালি বাসেই যেন তাদের এই দেখা হবার কথা ছিল। "তাসকিন ,তুমি কি আজও আমাকে ভালবাস?" "ভালবাসা কি কখনো হরায়? যদি অন্তরের ভেতরটা একবার দেখাতে পারতাম ,তবে দেখতে পেতে এতগুলো বছর ধরে কত শত ভালবাসার ফুল তোমায় দেবার জন্য জমে আছে।" একটা নতুন সূর্য যেন আজ তার আলোগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাস থেকে ,হতে হাত রেখে দুজন হারিয়ে যায় উদ্যানের সবুজে।
মলিন শুকনো পাতাগুলোকে মনেহয় যেন এক একটি স্বর্ণের খন্ড ।সে খন্ডগুলো কেবলই দ্যুতি ছড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে ।তারা দুজন মিলিয়ে গেছে এক নিবিড় প্রেম স্বর্গে।কিন্তু সেই স্বর্গ থেকে তাদের আবার নেমে আসতে হয় মর্তে । স্বর্গের চির রৌদ্রময়তাকে নিয়ে আসতে পারে না ,তাদের প্রেমের ইন্দ্রজাল। দুপুরের সূর্য বিকেল পেরিয়ে পশ্চিমের আকশে ঢলে পড়ে।আর সব পাখিদের মতই পায়ে পায়ে নীড়ে ফেরে তারা। নিজ নীড়ে বারান্দার সামনে দাড়িয়ে এক চিন্তার জগতে চলে যায় তাসকিন ।
তার মনের গহীনে তৈরি করতে থাকে এক প্রেমবীণার সুর। সেই অপরূপা কে সে কেবলই নানারূপে ,নানারঙে তার কল্পনায় সাজাতে থাকে। কিন্তু হায়, কোথা সে আবার খুঁজে পাবে তার প্রেম।তবে কি আবার সে তাকে হারিয়ে ফেলেছে? আচমকা তার দুই পা খসে পড়ে সেই স্বপ্নের ফেরি থেকে।তবু তো বিশ্বাস হতে চায় না ।"এ কখনই ভ্রম হতে পারে না।"শুধুই বারবার মনে হতে থাকে রিয়ানার কথা। রিয়ানাতো কথা দিয়েছিল ,তার হাত ধরে কথা দিয়েছিল ,বলেছিল.... "বল, সারা জীবন পাশে থাকবে,আমার পাশে ,আবার হারিয়ে যাবে না।" রিয়ানার কথা গুলো ফুটন্ত জলের বুদবুদের মত তার মনের মধ্যে বিষবাষ্প তৈরি করছে। আর ভাবতে পারে না তাসকিন। দঃসহ যন্ত্রনা কেড়ে নেয় তার চোখের বন্ধ হবার ক্ষমতা। তাসকিনের এই রাতটিকেই জীবনের সবচাইতে অসহনীয় আর উন্মাদনাময় রাত বলে মনে হতে থাকে। রাত শেষ হয়, ভোরের আলোর সোনালি আভা চারিদিকে ছড়িয়ে। সেই পাখিরা আবার বেরিয়ে পড়ে ,খুঁজে নেয় তাদের সঙ্গীকে।আর নিজেকে বোঝাতে পারে না তাসকিন। কুয়াশামাখা ভোরে সেই সব পাখিদের মত তাসকিনও সঙ্গীর খোঁজে বেরিয়ে পরে।দাড়িয়ে থাকে সেই বাসস্টান্ডটিতে যেখান থেকে সেদিন বাসে উঠেছিল রিয়ানা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় পাখিরা নীড়ে ফেরে।তাসকিনও ফেরে ।আবার ভোরে সেই পাখিদের মতই রিয়ানাকে খুঁজে ফেরে।ফিরে আসে পাখিদের সাথে।স্বপ্ন দেখে একদিন পাখিদের মতই খুঁজে পাবে তার সঙ্গী রিয়ানাকে।
মন্তব্য
Nitol Sah
মন্তব্য লিখুন...
পোস্ট করতে এন্টার চাপুন৷

অস্ফুট আমি

অস্ফুট আমি
নিটোল সাহা
যখনই কিছু বলতে চাই মুখ খুলে,
 তখনই কোন এক অদ্যৃশ্য হাত কন্ঠ চেপে ধরে।
যখনই গান গাইতে চাই পাখির মত ডানা মেলে,
 তখনই শকুন গুলোকে দেখে আমার ভয় করে।
 যখনই ভেঙে ফেলতে চাই শৃঙ্খল বেড়িগুলো,
তখনই আমার হাত কাটা পড়ে।
তবু বসে বসে স্বপ্ন আকিঁ এ কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে,
নতুন সূর্য হাসবে কোন এক ভোরে।

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

#‎বিষাক্ত_চুম্বন‬

#‎বিষাক্ত_চুম্বন‬ 

নিটোল সাহা

 ওহে বন্ধু ,স্পর্শ করো না ঐ ওষ্ঠ, তুমি জান না এর রক্তিম সৌন্দর্যে লুকিয়ে আছে হীরকচূর্ণ।
 হে বন্ধু , ঐ ছোয়া একদিন জ্বালাময়ী হয়ে শুধুই তোমায় দেবে কষ্ট,
পারবে না তুমি করতে করতে কল্পনা সে দৃশ্য,
 রিক্ত হবে তোমার ঐ অন্তর ,যা ছিল এতদিন পূর্ণ।
ঐ গরলের বিহিত কিয়্রায় ঝরে পরবে তোমার জীবন গোলাপের পাপড়ি গুলো
 যখন চাইবে মুক্তি তখনই বন্ধ হয়ে আসতে চাইবে তোমার ঐ কন্ঠ। 
যে মূহুর্তে তোমার চেতনার উন্মেষ হলো, তখন চাইলে নিজেকে দিতে মহাদন্ড, 
 তাতে লাভ কি হল বলো?
 করো না, করো না স্পর্শ ঐ ওষ্ঠ, 
হয়ো না ,হয়ো না ,বন্ধু পথভ্রষ্ট।